লোকে বলে SDF। সরকারি নাম নবদিগন্ত। কলকাতা মহানগরীর পূর্ব প্রান্তে
দিগন্ত বিস্তৃত এক লবণাক্ত জলাভূমিতে গড়ে উঠেছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। প্রতি বছর
হাজার হাজার তরুণ-তরুণী সেইসব সফটওয়্যার কারখানায় চাকরি শুরু করে। তারপর “কেরিয়ার”
নামের অদৃশ্য সাপ-লুডো খেলায় খেলতে নেমে তারা কেমন থাকে ?
পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে তারা কোথায় একটা যেন পৌঁছতে চায়। এদিকে চাকরির সাথে তাল
মেলাতে গিয়ে জীবনের দিকে ফিরে তাকানোর সময় নেই। দিবারাত্র নিজেদের নিংড়ে দেবার
পরে অন্য কোনো সত্তা যে আদৌ বেঁচে আছে, সেটাও বুঝতে
পারে না। তবু ভালোবাসা আসে। প্রেম, প্রিয়জন, পরিবার, সবাই
অপেক্ষা করে।
পৃথিবীর বহুজাতিক ধনকুবের কোম্পানীগুলো সারা পৃথিবী ছেঁচে তাদের “উন্নত” মস্তিষ্কগুলোকে অঢেল অর্থ দিয়ে কিনে নিয়েছে। অর্থ আর স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে আমাদের নবীন প্রজন্মের সোনার ছেলেমেয়েরা কি দিনের পর দিন নিজেদের বিক্রি করে চলেছে ? নিজেদের স্বপ্ন, আশা, চাওয়া-পাওয়া সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে সেই মুনাফা তৈরির কারখানার এক একটি নাটবল্টু হয়ে বেঁচে থাকাটাই হয়তো এ যুগে সাফল্যের মাপকাঠি। কে জানে !
নবদিগন্তের আধুনিক টেকনোক্র্যাট শ্রমিকেরা কি কাজ করে ? কেমন
থাকে তারা। তারা কি স্বপ্নের সিঁড়ি দেখতে পায় ?
দু-হাতে আঁজলা ভরে অর্থ উপার্জন করলেই কি জীবনের সমস্ত
সুখ-আনন্দ-ইচ্ছেপূরণ-আকাঙ্খা তাদের কাছে আপনা-আপনি এসে ধরা দেয় ?
সত্যিই কি তাই ! কি ভাবে ? সেখানে
কি জীবনের সমস্ত রঙ ধরা দেয় ? নাকি সেইসব রঙ
রামধনুর মতোই ক্ষণস্থায়ী? নাকি মরীচিকার
মতো তাদের টেনে নিয়ে যায় গভীর প্রাণহীন এক মরুভূমির কেন্দ্রে ? নাকি
চোরাবালিতে পা ডুবে যায় ধীরে ধীরে। নিজেদেরই অজান্তে। হয়তো তারা সেই ভাগ্যান্বেষীর
দল, যারা আরো একটু ভালো জীবনের খোঁজে জীবনযুদ্ধে নেমেছে, যারা
দুর্ভেদ্য চক্রব্যূহে প্রবেশের কৌশল জানে কিন্তু নিষ্ক্রমণের পথ খুঁজে না পেয়ে
নিজেদের অবচেতনেই একসময় অভিমন্যুর চরিত্রে পর্যবসিত হয়।
1 টি মন্তব্য:
নবদিগন্তের অভিমন্যুরা বইটি সদ্য পড়ে ফেললাম। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উপর ভিত্তি করে লেখা এই উপন্যাসে এই বহুচর্চিত শিল্পের কার্যকলাপের গভীরতাকে উন্মোচিত করা হয়েছে বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন মাত্রায়, যা নিয়ে কদাচিৎ কাউকে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে দেখা যায়। এই উপন্যাসে অকথিত আর অদেখা সেইসব ঘটনা, চরিত্র আর পুরো শিল্পের কঙ্কালটাকেই যেন লেখক প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন। যা চকচক করে তাই যে সোনা নয়, তা নবদিগন্তের আকাশচুম্বী অট্টালিকার বাইরে দাঁড়িয়ে বোঝা সম্ভব নয়। ভেতরের সেই চিত্রকেই সঞ্জয় তাঁর সাহিত্যিক সৃজনশীলতা এবং কল্পনায় এই অনবদ্য কথাসাহিত্যে রূপ দিয়েছে। যারা সেইসব তথ্যপ্রযুক্তি কারখানায় ভেতরে আছেন, তারা তো সত্যিকারের চরিত্র, তাদের পরিণতি এবং ঘটনাগুলিকে যেন চোখের সামনে দেখতে পাবেন। আমরা তার পরবর্তী সৃষ্টির অপেক্ষায় থাকবো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন