বিশুদ্ধ বাতাস

হাঁপানির মানুষেরা ভোরে কাক ডাকার অপেক্ষায় থাকে। দু’একটা কাক ডেকেছে কি ডাকে নি তার আগেই সুজাতাদেবী বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। আঃ, কি শান্তি। বাড়িতে পাঁচিল ঘেরা এই এক ফালি জায়গাটুকু আছে বলেই মনে হয় আরো কিছুদিন বাঁচা হবে। সুজাতাদেবী আকাশের দিকে তাকালেন। এবার, দূরে পূর্ব কোণে একটু কমলা রঙের আভাস দেখা দিয়েছে। পাঁচিলের বাইরে জাম গাছে পাখিগুলো সবে আড়মোড়া ভাঙছে হয়তো। 

তখনই সুজাতাদেবীর চোখ গেল বাগানের পাঁচিলঘেঁষা ছোট্ট ঘরটার দিকে। এখনো আলো জ্বলছে কেন? সুজাতাদেবী একেবারে ক্ষেপে গেলেন। লোকটার কি কোনদিন আক্কেল হবে না? নয় নয় করে বছর পাঁচেক পেরিয়ে গেল পেনশন পাচ্ছেন। তবু আধ-পাগলামিটা গেল না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বছর পড়িয়েও পড়ানোর আশ মেটেনি। তখন রাত জেগে পরের দিন ক্লাসে কি পড়াবেন তার নোট করতেন আর এখন সেটা নেই বলে ওই ঘুপচি ঘরটাতে বসে রাতদিন গবেষণা করছেন। সুজাতাদেবী যদি বলেন, এখন তো আর ক্লাস নিতে হবে না, তবে এত রাত অব্দি না জাগলেও তো পারো। শুনে আজকাল শুধু মিটিমিটি হাসবেন আর বলবেন, আর তো মাত্র কয়েকটা দিন, তারপর ঘুমোনোর জন্য তো অনন্তকাল পড়ে আছে। যারা বেঁচে থাকবে তাদের জন্য কিছু একটা করা দরকার। শুনে গা-পিত্তি জ্বলে গেলে সুজাতাদেবী হয় রান্নাঘরে ঢুকে পড়েন আর নয় টিভির সামনে বসে থাকেন। যত আদিখ্যেতা!

ভাবতে ভাবতে সেদিকে এগোলেন সুজাতাদেবী। ঘরে ঢুকেই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। এটা ঘর! না আঁস্তাকুড়ের ঢিবি। চারিদিকে অজস্র কাঁচের বোতল, তাতে হরেক রঙের তরল। টেস্ট-টিউব, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা বই। দরজার ওপর থেকে একটা গামছা ঝুলছে ঝড়ে উড়ে আসা ছেঁড়া পতাকার মতো। বিছানার চাদরটা কুঁচকে একপাশে ডাঁই হয়ে পড়ে আছে। কই, তাকে তো দেখা যাচ্ছে না? আর একটু ভেতরে যেতেই দেখলেন টেবিলের ওপাশে আলনায় ঝোলানো কয়েকটা অগোছালো জামাকাপড়ের পেছনে চেয়ারে বসে ডঃ বিনায়ক। নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। একটা আধখোলা বই পেটের উপর রেখে।

সুজাতাদেবী তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। টেবিলের উপর দু’টো টেবিলল্যাম্প জ্বলছে। ভাবলেন, এই আক্রার বাজারে, কি চড়চড় করে বিদ্যুতের বিল উঠে আর সেখানে দু-দু’টো বাল্ব সারারাত ধরে চলছে! এদিক ওদিক ঘুরে সুইচ্‌ দেখতে পেলেন না যে আলো দু’টো নিভিয়ে দেবেন। আরো রেগে গেলেন। দেখলেন আলো দু’টো সোজা গিয়ে পড়ছে একটা কাঁচের থালার উপরে। একটা থকথকে কালো রঙের কিছু রয়েছে। আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতেই স্পঞ্জের মতো মনে হলো। এই সব গবেষণা হচ্ছে? সারারাত ধরে এই স্পঞ্জ তৈরী করছিল। বুড়োর কি মাথা ঠিক আছে?

ঘুরে গিয়ে ফিরে যাবার সময় হটাৎ খেয়াল হলো ঘরে কিন্তু এক ফোঁটা গন্ধ নেই। দরজা বন্ধ ছিল। সমস্ত জানলাগুলোও সারারাত বন্ধ। কিন্তু একটুকু গুমোট ভাব নেই। উলটে বেশ তাজা হাওয়ার স্পর্শ পাচ্ছেন। তিনি ভোরবেলায় উঠে মাঠে বেড়াতে যান। সকালের তাজা ঠাণ্ডা হাওয়া নাকে এলেই শরীরটা কেমন যেন চনমনে হয়ে ওঠে। আবার একবার একবুক বাতাস টেনে নিলেন। তাইতো, এ ঘরে তো ঠিক সেই ভোরের হাওয়ার গন্ধ।

“এখানে দাঁড়িয়ে কেন? বেড়াতে যাওনি?” – বিনায়ক বাবুর গলার শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলেন সুজাতাদেবী। কিছু একটা বলতে যাবেন কিন্তু তার আগেই বিনায়ক বাবু টেবিলের সামনে এসে সেই কাঁচের থালায় কালো থকথকে স্পঞ্জের সামনে কয়েক পলক দাঁড়িয়ে হটাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন। গো...ও...ও...ল, গোল মেরে দিয়েছি। তারপর সোজা এক লাফে সুজাতাদেবীর দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। দু’টো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “বলো তো, তোমার এই ঘরে কিছু হয়েছে মনে হচ্ছে?”

সুজাতাদেবী আর একটু হলেই ঝাঁকুনি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। খাটে বসে বললেন, “তুমি ওরকম গাঁকগাঁক করে চেঁচাচ্ছ কেন?”

“চেঁচাবোই তো, এবার পৃথিবী শুদ্ধ চেঁচিয়ে বেড়াবো। ঢাক-ঢোল নিয়ে চেঁচাবো।” ঘুরে গিয়ে আবার একবার টেবিলের সেই থালাটার দিকে তাকালেন। দৌড়ে এসে বাচ্চা ছেলের মতো লাফিয়ে খাটের উপর বসে পড়লেন। সুজাতাদেবীর পাশে।

“কি বললে না তো। এঘরে এতক্ষণ থেকেও কিছু মনে হচ্ছে না?”

“কি আবার মনে হবে?” - তারপর বন্ধ জানলাগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই গরমে জানলাগুলো সারারাত বন্ধ করে রেখেছ? বলিহারি মানুষ তুমি।”

“তাই তো বলছি গিন্নি, বলো তো, কিন্তু তোমার কি মনে হচ্ছে যে দরজা-জানলা বন্ধ ছিল এতক্ষণ।”

সুজাতাদেবী এবার সত্যিই অবাক হলেন। সত্যি তো, সারারাত ঘরের জানলা-দরজা বন্ধ ছিল। অথচ ঘরে তাজা হাওয়ার আবেশ। দু’চোখ বন্ধ করলেন। জোরে জোরে বেশ কয়েকবার প্রশ্বাস নিলেন। বুকের ফুসফুসগুলো যেন তরতাজা হয়ে উঠল। নিশ্বাস নিতে ভালো লাগছে। পঁচিশ বছর ধরে তিনি হাঁপানির রুগী। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বুঝি পৃথিবীর সমস্ত বাতাস শেষ হয়ে এলো। মাঝরাতে হটাৎ ধড়ফড় করে উঠে বসে পড়েন। ইনহেলারটা নাকে চেপে ওই বারান্দায় এসে দাঁড়ান। একটু তাজা হাওয়া বুকে ভরবেন বলে। বললেন, “না তো, বেশ ভালো লাগছে। কি হলো কি?”

সুজাতাদেবী বলা মাত্র বিনায়কবাবু ঘরের চারপাশে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরতে লাগলেন। সুজাতাদেবী দেখছেন আর ভাবছেন মানুষটা কি সত্যিই পাগল হয়ে গেল নাকি! এবার জোরে ধমকালেন। “এদিকে এসে বোসো দেখি। কি হয়েছে? এত লাফাচ্ছো কেন?”

বিনায়ক বাবু আবার খাটে এসে বসলেন। বললেন, “আমি পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি।”

সুজাতাদেবী ভাবলেন, এ বলে কি? বললেন, “কিসের সমস্যা, কিসের আবার সমাধান?”

বিনায়ক বাবু পা গুটিয়ে পদ্মাসনে বসলেন। বললেন, “প্রচুর সমস্যা গিন্নি। দেশের লোকের সমস্যা, তোমার সমস্যা, সব সমাধান করে ফেলেছি।”

“মানে? হেঁয়ালি না করে বলবে কি হয়েছে?”

“তাহলে শোন।” বিনায়ক বাবু তাঁর প্রফেসারি মেজাজে ফিরে গেলেন। “তুমি তো জানো প্রতিদিন একটু একটু করে পৃথিবী গরম হয়ে যাচ্ছে। বরফ গলে যাচ্ছে। সমুদ্রের জল বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বলে দিয়েছেন আর ছিয়াশি বছর পরে কলকাতাও নাকি ডুবে যাবে। সঙ্গে পৃথিবীর আরো কুড়িটা বড় বড় শহর, যেগুলো এখন সমুদ্রের পাশে, সেগুলোও ডুববে। অবশ্য মানুষগুলো তার আগেই অনেক মরে যাবে। কিছু না খেতে পেয়ে, কিছু যুদ্ধ করে।”

“তুমিও সেই পরমাণু যুদ্ধের কথা বলছো? সে তো সবাই জানে। এ আবার নতুন কি শোনাচ্ছ।”

“না গিন্নি, পরমাণু নয়। জলের জন্য। জলের জন্য এবার বিশ্বযুদ্ধ হবে। এখন যেমন তেলের জন্য যুদ্ধ হচ্ছে। তৃতীয় যুদ্ধটা হবে জলের জন্য। কারণটা বুঝতে পারলে না? পৃথিবী গরম হয়ে যাচ্ছে বলে, জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে না আবার কোথাও বন্যা হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি যেন এবার আমাদের একেবারে সাঁড়াশীর মতো চেপে ধরেছে।”

“তো তুমি কি করবে?”

“কারণ তো একটাই। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেশী হয়ে যাচ্ছে। আর সে সূর্যের তাপ ধরে রাখছে।”

“তো? তুমি কি করবে, অ্যাঁ। টেবিলল্যাম্পগুলো সারা রাত জ্বলেছে। বাইরে কখন রোদ উঠে গেছে। তাও সেগুলো জ্বলছে। গতমাসে কত বিল এসেছিল মনে আছে? এখন তোমার সাধের পৃথিবীটা গরম হচ্ছে না?”

বিনায়কবাবু আকর্ণবিস্তৃত হাসলেন। তারপর ওই কাঁচের পাত্রে রাখা থকথকে কালো জেলির মতো বস্তুটাকে সুজাতাদেবীর চোখের সামনে ধরলেন। বললেন, “এটা কি বলতো? এটা একটা ধরনের ব্যাকটেরিয়া।”

সুজাতাদেবী ধড়ফড় করে পাদু’টো তুলে খাটের উপর রাখলেন। যেন পায়ের তলা দিয়ে কয়েকশো আরশোলা চলে যাচ্ছিল। বললেন, “তুমি এখন ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ঘাঁটছো? কিছু আর বাকি রাখলে না দেখছি।”

“আহা! ক্ষেপছো কেন? শোনো তো একবার। এই ব্যাকটেরিয়া খারাপ কিছু করবে না। এরা এমনিতে সারাক্ষণ চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকে। কারো কোন ক্ষতি করে না। আবার ভালোও করে না। কিন্তু আমি আবিষ্কার করেছি যে এদের যদি তুমি কয়েক ফোঁটা এন্‌জাইম খাইয়ে দিয়ে আলোর সামনে ফেলে রাখো তো এরা তোমাকে যুদ্ধে জিতিয়ে দিতে পারে।”

সুজাতাদেবী হাঁ করে বসে আছেন। বিনায়ক বাবু সেদিকে তাকিয়ে বললেন, “বুঝলে না? এই ব্যাকটেরিয়াগুলো তখন জেগে ওঠে আর শুধু খেতে চায়। কি খায়? বাতাস খায়। খায় তো খায়, খেতেই থাকে। ঠিক কি খায়? বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড খায়।”

“কার্বন-ডাই-অক্সাইড খায়? মানে?” – সুজাতাদেবীর চোখে তখন অনেকগুলো প্রশ্ন।

“একটু ভুল বললাম। ঠিক কার্বন-ডাই-অক্সাইডও খায় না। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কার্বনটা খেয়ে নেয় আর অক্সিজেনটা ঢেঁকুর তুলে বের করে দেয়?”

“তারপর?” – সুজাতাদেবীর আগ্রহ বাড়ছে।

“যত কার্বন খায় তত শরীরে বল বাড়ে। এই যে আমরা যা খাবার খাই সবই তো সেই কার্বোহাইড্রেড, কার্বন থেকেই তৈরী। না কি? তো ঠিক সেই রকম। যত কার্বন খায় তত বংশবৃদ্ধি হয়। ঝড়ের গতিতে বাড়ে। মানে, ধরো এক ঘন্টায় পনেরো ষোলটা বংশ শেষ হয়ে গেলো। যত ঝাড়ে বংশে বাড়ে তত কার্বন খায় আর তত ঢেঁকুর তোলে। মানে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ঢেঁকুরের সাথে বেরিয়ে আসে।”

“মানে যত কার্বন খায় তার দু’গুন অক্সিজেন? ওয়াও! মানে সেই CO2 ভেঙে একটা কার্বন আর দু’টো অক্সিজেন পরমাণু। একটা কিনলে দু’টো ফ্রি?”

“ইয়েস গিন্নি, ইয়েস। ভাবো তো এবার তাহলে। এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো যদি বেশী বেশী করে এনজাইম খায়। কি হবে?”

“হবেটা আর কি? কার্বন হজম হয়ে যাবে? কিন্তু এত কার্বন জমা হবে কোথায়।”

“ওদের পেটে। এই দেখো এখানে।” বিনায়ক বাবু সেই কাঁচের থালাটা আবার চোখের সামনে তুলে ধরলেন। বললেন, “এই দেখো, এটা কি দেখছ? একটা কালো ভুশুণ্ডি থকথকে জেলির মতো। এটা কিন্তু তা ছিল না। এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো প্রথমে অনেক হাল্কা নীলচে মতো লাগে। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখলে বুঝতে পারবে। আমি এর সাথে দু’ফোঁটা এন্‌জাইম দিয়েছি। আমার ফর্মূলাতে তৈরী এন্‌জাইম। তারপর তাদের এই টেবিলল্যাম্পের আলোয় রেখে দিয়েছি। এরা আলো আর এন্‌জাইম পেয়ে জেগে উঠেছিল। সারারাত ঘরের যত কার্বন-ডাই-অক্সাইড খেয়ে কার্বন শরীর জমা করেছে আর কালো কুচকুচে হয়েছে। অক্সিজেন ছেড়ে দিয়েছে বাতাসে।”

সুজাতাদেবীর চোখগুলো দিয়ে এখন আনন্দ ছিট্‌কে বেরোচ্ছে। বললেন, “ওঃ মা, তাইতো বলি, আমি যখন ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকলাম তখন বেশ একটা দারুন তাজা তাজা ভাব। তাইতো বলি, সমস্ত কিছু বন্ধ ছিল তবু বাতাস এত তাজা কেন?”

“তাহলেই বোঝো, এবার এদের যদি তুমি রোদে রেখে দাও, এরা মহানন্দে কার্বন খাবে আর আমাদের জন্য অক্সিজেন পাঠাবে। পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল কিনা বলো?”

সুজাতাদেবী কিছু একটা ভাবছেন। তারপর হেসে বললেন, “তাহলে আর যুদ্ধ হচ্ছে না বলো। সমস্যাই থাকলো না তো যুদ্ধ হবে কেন? তাই না?”

“ঠিক, আর একটা কারনেও যুদ্ধ হবে না। আজ যারা তেলের জন্য, মানে সারা পৃথিবীর যেখানে যত তেল জমা আছে সেগুলো জোর করে কেড়ে নেবার জন্য যুদ্ধ করছে, তারা তো আর অক্সিজেন কেড়ে নিতে পারবে না?”

“তাইতো, এটা তো আমার মাথায় আসেনি। কর না এবার যুদ্ধ, কর। কি নিয়ে যুদ্ধ করবি কর।” সুজাতাদেবীকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। কিন্তু আবার কি মনে হতেই বললেন, “তা, হ্যাঁগো, এরা, মানে এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো যদি কার্বন খেতেই থাকে মানে খেতেই থাকে, খেতেই থাকে তাহলে বাতাসে একদিন কার্বন তো শেষ হয়ে যাবে?”

“ঠিক বলেছো। আর বাতাসে কার্বন যদি কম পড়ে তাহলে গাছগুলো করবে কি? গাছেরা বড় হবে কি করে, ফল-ফসল তো তৈরী হবে না।”

“তাহলে কি হবে।” এবার সুজাতাদেবী শঙ্কিত হলেন। “তাহলে তো সেই একই হোল। ফসল কম হলে, লোকে আবার খাবারের জন্য যুদ্ধ করবে। এই তুমি কিন্তু কিছুতেই যুদ্ধটাকে থামাতে পারছো না। ঠিক কোন না কোনভাবে যুদ্ধ লেগেই যাচ্ছে।”

বিনায়ক বাবু হাসলেন। “আমি যুদ্ধ থামাতে পারি কিন্তু তার আগে আমার এক কাপ চা চাই। বেশ কড়া করে। এই শালা ব্যাক্টেরিয়াদের বংশবৃদ্ধি দেখতে গিয়ে, তাও আবার মাইক্রোস্কোপের তলায়, আমার সারা রাত ঘুম হয়নি।”

“দিচ্ছি বাবা দিচ্ছি। কিন্তু বলেই দাও না। আমার বড্ড টেনশন হচ্ছে। যুদ্ধটা থামাবে কি করে?”

বিনায়কবাবু মুচকি হেসে বললেন, “আরে বাবা, ওদের একটু কম খেতে দিলেই হবে। কম এন্‌জাইম দিলে আস্তে আস্তে বড় হবে। একসময় বংশবৃদ্ধি কমে যাবে চক্রাকারহারে। খুশি তো? এবার তো চা দেবে।”

সুজাতাদেবী ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় যাচ্ছিলেন। বেশ হাল্কা হাসি মুখে লেগে আছে। চৌকাঠের ওপার থেকে আবার ফিরে এলেন। বললেন, “এই, শোনো, তোমার ওই গুটি কয়েক ব্যাক্টেরিয়া একটা প্লেটে করে আমার ঘরে রেখে দিও তো। আজ থেকে রাখবে কিন্তু, যা ভুলো মন তোমার।” বলেই ফিরে গেলেন সুজাতাদেবী। যেতে যেতে বিনায়কবাবু শুনতে পেলেন সুজাতাদেবী বলতে বলতে যাচ্ছেন, “যাক বাবা, এতদিনে লোকটা একটা কাজের কাজ কিছু করেছে। আমারও বেশ ভালোই হলো। ব্যাক্টেরিয়াগুলো সারা রাত ধরে আমার ঘরে বেশ অক্সিজেন ছাড়বে। আমি যা হাঁপানির রুগী।”
- o -
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
কলকাতা