পটল, ধেনো, পাত্তি, ল্যাংড়া,
চুন্নু - নামগুলোকে বেশ চেনা চেনা লাগছে না! একদম ঠিক ধরেছেন। এদের যেমন
বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, তেমনি অপরাধ জগতেও এই নামগুলো অতি পরিচিত।
অনেকটা গরুর গায়ে এঁটুলির মতো সম্পর্ক।
তবে বেশীর ভাগ সময়ে এই নামগুলো জলহস্তীর মতো শুধু নাকটুকু
জলের বাইরে থাকে, বাকিটা সুপ্ত। অন্ধকারের জীব। ব্যাতিক্রম, শুধুমাত্র ভোটের সময়টুকু। তবে অন্যসময় ওই যে নাকটুকু বেরিয়ে থাকে তাতেই
জনজীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে।
এরা সর্বত্রগামী। সকাল বেলায় রাস্তা কিংবা গলির মোড়ে। বেলা বাড়লে সব্জি বাজারের এক কোণায় একখানা ক্যারামের টেবিলের চারপাশে মাছিদের মতো ভনভন করে। বিকেলে সূর্যদেব বিশ্রামে গেলেই ভাঙা লাইটপোষ্টের নিচে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর একটু বেশী রাত হলে হয় অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, দুর্গন্ধ ছড়ানো নালার গা ঘেঁষে চুল্লু মদের দোকানের পাশে গড়াগড়ি খায় আর নয়তো কারো সর্বনাশ করার ধান্দা খোঁজে।
এরা সর্বত্রগামী। সকাল বেলায় রাস্তা কিংবা গলির মোড়ে। বেলা বাড়লে সব্জি বাজারের এক কোণায় একখানা ক্যারামের টেবিলের চারপাশে মাছিদের মতো ভনভন করে। বিকেলে সূর্যদেব বিশ্রামে গেলেই ভাঙা লাইটপোষ্টের নিচে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর একটু বেশী রাত হলে হয় অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, দুর্গন্ধ ছড়ানো নালার গা ঘেঁষে চুল্লু মদের দোকানের পাশে গড়াগড়ি খায় আর নয়তো কারো সর্বনাশ করার ধান্দা খোঁজে।
এদিকে ভোটের হাওয়া গায়ে লাগতেই এদের চিকনাই বাড়তে থাকে। মুঠো ভর্তি কাঁচা টাকা আর গলা অব্দি নির্জলা মদ গিলে, হাতের পেশী ফুলিয়ে নেমে পড়ে নিজের-নিজের দাদা-দিদিদের খিদমতগারিতে। ভোটের আগের দিন “হুমকি” থেকে শুরু করে “অ্যাকশান” করার জন্য একপায়ে খাড়া। ভোট দিতে যাবার রাস্তায় দাঁত কেলিয়ে হাসি আর নেহাৎ কেউ বেগড়বাই করলেই রাম প্যাঁদানি। পাটকাঠির মতো শব্দ করে দু'চারটে ভাঙা হাড় হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় তারা সিদ্ধহস্ত।
তবে এ বছরের ভোটে বাজারে সেইসব “বাহুবলীদের” বাজার নিতান্তই খারাপ গেল। গলায় আড়াই ভরি সোনার চেন, হাতে স্টীলের বালা আর সাথে দেওঘর কিংবা বারানসীর ঘাটে ঘাটে বট কিংবা
অশ্বত্থগাছের গুঁড়িতে যেমন লালসুতো প্যাঁচানো থাকে, তেমনি হাতে চওড়া করে লালসুতো
বেঁধে পাড়া চরে বেড়াতেও দেখা গেল না।
এখানেই যাদু...সেটা কি? তার আগে একটা গল্প বলি।
ছোটগল্পের গল্প।
অনেকদিন আগে পড়া সমরেশ মজুমদারের লেখা একটি গল্প মনে পড়ে গেল। “কেউটের
জাত”। একটি ছাপোষা বাঙালীর কোন এক অপারেশনের সময় ধর্মপত্নী তাঁর “আসল শিরদাঁড়াটি” খুলে
রেখে “প্লাস্টিকের শিরদাঁড়া” লাগিয়ে দিয়েছিলেন। পুরুষের জাত। চিতায় তোলার আগে পর্যন্ত তাদের তো আর বিশ্বাস
করা যায় না। তবে মাঝে মধ্যে প্রয়োজন মতো আসলটি ব্যবহার করা হতো। সবটাই
ধর্মপত্নীর ইচ্ছানুযায়ী। কারন যে আলমারিতে আসলটি থাকতো তার চাবি গৃহকর্ত্রী
কিছুতেই হাতছাড়া করতেন না।
“আসলে এবারের ভোটপরবে নাগরিক সমাজের একটিই প্রাপ্তি। নির্বাচন কমিশন আর পুলিশ এমন হাতযশ আর যাদু দেখিয়েছে যে এবার তারা ওই সব বাহুবলীদের শিরদাঁড়াটি খুলে নিজেদের কাছে রেখে দিতে পেরেছিলেন। কড়া চাবুক, তেল মাখানো লাঠির গুঁতো আর আইনের ধারায় সেই সব কাগুজে দৈত্যগুলো এবার সত্যি সত্যি “বোতলবন্দী”। নিরম্বু উপবাস করে, নির্ঘুম রাত জেগে বানানো বোমাগুলো ফাটানো গেল না। বাইরে থেকে আনা পাইপগানগুলোয় মরচে পড়ে গেল। উল্টে পুলিশের তাড়া খেয়ে কখনো লেজ তুলে দৌড় দিতে হয়েছে কিংবা লাঠির ঘা খেয়ে ঘরে এসে মশারির স্ট্যান্ডে পা ঝুলিয়ে বরফ লাগাতে হয়েছে।
জনগণের চোখ-কান চিরদিনই খোলা থাকে তবে সেগুলো সবসময় কাজে
লাগে না। তবে এবার নির্বাচন কমিশন, আধা-সামরিক বাহিনী আর পুলিশের
ভূমিকাকে জনগন উচ্চকন্ঠে প্রশংসা করেছেন। দু'হাত তুলে
আশির্বাদ করেছেন আইনের রক্ষকের ভূমিকায় তাদের স্বমূর্তিতে ফিরে আসার জন্য।
তবে কিনা প্লাষ্টিকের শিরদাঁড়াতেও মাংস গজাতে পারে। তাই লেখকের
গল্পের শেষে সেই গৃহকর্ত্রী শেষমেষ “মোমের শিরদাঁড়া” লাগাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঠিক সেইরকম
এবার থেকে জনগণও আশা করেন সাংবিধানিক ভূমিকা অনুযায়ী আইনের রক্ষকেরা এমন ব্যবস্থা নেবেন যে ওই সব
বাহুবলীরা আর কখনো পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে না পারে।
1 টি মন্তব্য:
Timely posted Sanjoy. Perfectly matches what we saw. This message should spread spread and spread.
Keep writing
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন