বিকেলের সূর্যটা পশ্চিম আকাশের এক কোণায় গিয়ে আটকে আছে। হরিহর সেই ডুবন্ত
সূর্যের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন কখন আলো নিভে আসে। আজকাল সূর্যের আলো তাঁর
আর সহ্য হয় না। ভোরের আলো ফোটার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন সাইকেলটা নিয়ে। পাক্কা
তিন ক্রোশ সাইকেল চালিয়ে যখন ডাকঘরে পৌঁছন তখন পরিষ্কার ঝকঝকে সকাল। হরিহর তড়িঘড়ি সাইকেল
থেকে নেমে, অন্য কেউ তাঁকে লক্ষ্য করার আগেই, সোজা চলে যান পোস্টমাস্টারের জন্য নির্দিষ্ট
ঘরে। ষাট ওয়াটের একটা বাল্ব লাগানো আধা-অন্ধকার কুঠুরিতে সেই যে তিনি ঢুকে পড়েন,
আবার সূর্য পশ্চিমে না ঢলে পড়া পর্যন্ত চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরে আসবেন না।
তবে আজ তিনি একটু আগেভাগেই পোস্টঅফিস থেকে বেরিয়েছেন। সূর্যটা সামনের টিলার চূড়া থেকে টুক্ পড়ে অদৃশ্য না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত শিমুল গাছটার নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। এই পাহাড়ী পথে, যেখান দিয়ে লোকে সাইকেলে যেতে পারে, সেই পথে লোকজন বিশেষ হেঁটে যাওয়া-আসা করে না। পাহাড়ের গা ঘেঁষে পায়ে চলার রাস্তা করে নিয়েছে। সূর্য ডুবে যাওয়া মাত্রই অন্ধকারের কালো ওড়নাটা যেন পাহাড়ী জঙ্গুলে পথটাকে মূহুর্তেই
ঢেকে ফেলল। সঙ্গে
সঙ্গেই চারপাশের জঙ্গলের যত রাতচরা পাখি, পোকা-মাকড়, ঝিঁঝিঁগুলো যেন সবাই একসাথে
ডাকতে শুরু করে দিল। হরিহর চুপচাপ দাঁড়িয়েই রইলেন। দিনের আলো সরে যেতেই দেখলেন
কেমন ভাবে চরাচর ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসতে থাকে।
পুকুরে মাছের জাল ফেলার মতো সেদিনও ঠিক এমনি ঝুপ্ করে সন্ধ্যা নেমে এসেছিল।
তার উপর আগেরদিন থেকে ঝির্ঝির করে একটানা বৃষ্টি হচ্ছিল তো হচ্ছিলই। শীতের শুরুতে
ওই অসময়ের বৃষ্টির জন্য একটু ঠান্ডা-ঠান্ডা ভাব এসেছিল বাতাসে। হরিহর তাই সেদিন একটু
তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে চাইছিলেন। জোরে জোরে সাইকেল চালাচ্ছিলেন। যদি বৃষ্টি শুরু
হওয়ার আগেই বাড়ি পৌঁছানো যায়। কালো আকাশ ফাটিয়ে প্রচন্ড শব্দে বাজ পড়ছিল
মূহুর্মূহু। ঠিক এখানে পৌঁছতেই বৃষ্টিটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই শিমূল গাছটার নিচেই
দাঁড়িয়েছিলেন সেদিন। বৃষ্টির সাথে সাথে আকাশ চিরে ফালাফালা করে দিচ্ছিল ঝলকে ঝলকে নেমে
আসা বিদ্যুৎ। প্রচন্ড ঝড়ের শব্দে কান পাতা যাচ্ছিল না। সাইকেলটাকে গাছের গুঁড়িতে ঠেসিয়ে
রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছিলেন। ঝড়-বৃষ্টি-বিদ্যুৎ যখন দামালের মতো ছুটে বেড়াচ্ছিল,
ঠিক তখনই একটা তীক্ষ্ণ অথচ চাপা গোঙ্গানির শব্দ যেন সেই তান্ডবের মধ্যে ঢুকে
পড়েছিল। একবার নয়, বেশ কয়েকবার। হরিহর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে সেই শব্দের উৎস বোঝার
চেষ্টা করছিলেন। তুমুল বর্ষণের ধারায় চারিদিক অস্পষ্ট। কয়েক হাত দূরের কিছুই দেখা
যায় না, তার উপর ওই অন্ধকারে কিছু ঠাওর করা মুস্কিল। দমকে দমকে ছুটে আসা সেই শব্দ কয়েকবার
কুন্ডলির মতো হরিহরের চারপাশে পাক খেয়ে মিলিয়ে যেতেই কোন এক অজানা আশঙ্কায় তাঁর
অন্তরাত্মা আপাতমস্তক কেঁপে উঠেছিল। সেদিন শীতের রাত্রে অসময়ের বৃষ্টিতে আপাদমস্তক
ভিজে কাকভেজা হয়ে গিয়েছিলেন বলেই তিনি ভীষণ ভাবে কাঁপছিলেন তা কিন্তু নয়। কারণ সেই
ঘটনার তিন বছর পরে আজও, এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তিনি যেন সেদিনের সেই
কাঁপুনিটাই আবার অনুভব করলেন প্রতিটি শিরার রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
তার পরের ঘটনাক্রম সব একের পর এক আলোর মতো পরিস্কার হতে শুরু করেছিল পরদিন
সকালের আলো ফোটার আগেই। খুব ভোরে, কেউ কোথাও ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাড়ির সদর দরজা
ভেঙ্গে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েছিলো পুলিশ। ঘরে ঢুকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে গগনকে বিছানা থেকে
তুলে নিয়ে গেল তারা। ঘাড় নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে গগনের নিস্পলক,
নিরুত্তাপ মুখ দেখেই হরিহর বুঝে নিয়েছিলেন এই ছেলে তার কাছে আর কোনদিন ফিরে আসবে
না। তখনও হরিহর জানতেন না যে গগন তাঁর এত দিনের শিক্ষা-দীক্ষা, সম্মান সবকিছু ধুলোয়
মিশিয়ে দিয়ে তাঁর বেঁচে থাকার শেকড়টাকেই সমূলে উপড়ে ফেলেছে গতকালের ওই বর্ষনক্লান্ত
গোধুলির সন্ধ্যায়।
বাকিটা ঘটনাগুলো এখন এই গ্রামে তিনবছরের পুরানো ইতিহাস। গগন আর তার সাথে আরও
তিনজন মিলে সেই রাতে হিমানীকে যেভাবে লাঞ্ছিত করে তার নারীত্বের চরম অপমান করেছিল,
সেটা হিমানীকে নদীর অদূরের ওই জঙ্গল থেকে যারা ভোররাত্রে উদ্ধার করেছিল তারাই
জানে। ঘন্টার পর ঘন্টা একাধিক নরপিশাচের শারীরিক অত্যাচারে মৃতপ্রায় হিমানী সারারাত
সেখানেই পড়ে ছিল।
পাহাড়ের উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলা পাথরের মতো পরের ঘটনা প্রবাহ খুব দ্রুত গড়িয়ে
চলল। হিমানীর ডাক্তারী পরীক্ষায় সত্যতা প্রমাণের পরেও আশ্চর্যজনকভাবে সেই চারজনের
মুখ ছিল আগাগোড়া ভাবলেশহীন। প্রথমে কয়েকদিন জেল হেপাজত। জেল থেকে আদালতে প্রতিদিন তাদের
নিয়ে আসা-যাওয়ার পথে সেই চারজনের অনুতাপহীন মুখ দেখে জনগনের রাগ, রোষ গ্রামের সীমানা
ছাড়িয়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল আশপাশের সমস্ত গ্রাম-শহর ছাড়িয়ে যতদূর জনবসতি
আছে ততদূর পর্যন্ত।
তারপর যেদিন মামলা শুরু হলো, আদালতের বাইরে উত্তাল জনসমুদ্র চিৎকার করে উঠেছিল
জনগনের হাতেই ওই চারজনকে ছেড়ে দেবার জন্য। সেই তুমুল হৈ-হট্টগোলের মাঝে অভিযুক্ত
চারজনকে যখন আদালতে তোলা হলো, তখনই হটাৎ করে দেখা গেল গগনের ঠাকুমাকে। আদালতের এক কোনায়
জড়োসড়ো হয়ে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গগনকে এনে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো মাত্রই
সেই বুড়ি একটা মলিন কাগজকে হাতে তুলে চেঁচিয়ে তেড়ে গেলেন সরকারী উকিলের দিকে। সেই
কাগজখন্ডটুকু বুড়ির হাত থেকে উকিলের মারফত বিচারকের হাতে পৌঁছে যাওয়া মাত্রই গগনের
ভাগ্য আলাদা হয়ে গেল। তাকে সরিয়ে নেওয়া হলো বাকি তিনজনের বিচার পদ্ধতি থেকে। গগনকে
চালান করা হলো নাবালক আদালতে। এর কয়েকদিনের মধ্যেই আইনের অবধারিত রায়ে সে পেল তিন বছরের
সাজা। গগন স্কুলের গন্ডী পেরোনো পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি ঠিকই কিন্তু সেই
পরীক্ষায় বসার অনুমতিপত্র নামে শত ভাঁজে মলিন একখানি কাগজের টুকরো প্রমাণ করে
দিয়েছিল তার বয়স তখন মাত্র সতের বছর ছ’ মাস।
সাজা ঘোষণার দিন গগনকে যখন পুলিশের গাড়ীতে তোলা হচ্ছিল, তখন সবার অলক্ষ্যে, অনেকদূরে একটা বাড়ির ছাদে চুপচাপ একা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন হরিহর। হরিহর কিন্তু এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারেন গগনের সেই নির্বিকার, অনুতাপহীন চেহারা।
সাজা ঘোষণার দিন গগনকে যখন পুলিশের গাড়ীতে তোলা হচ্ছিল, তখন সবার অলক্ষ্যে, অনেকদূরে একটা বাড়ির ছাদে চুপচাপ একা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন হরিহর। হরিহর কিন্তু এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারেন গগনের সেই নির্বিকার, অনুতাপহীন চেহারা।
হরিহরের চোখ এড়িয়ে যায়নি গাড়িতে ওঠার মুখে সবার দিকে তাকিয়ে গগনের ঠোঁটের কোণে সেই একটুকরো তাচ্ছিল্যের হাসি। কারণ এরমধ্যে গগন নিজেও জেনে ফেলেছিল যে এ দেশের একুশে আইনের দৌলতে কারও চোদ্দপুরুষ কেন, মহান সুপ্রিমকোর্টেরও ক্ষমতা ছিল না তাকে তিনবছরের বেশী শাস্তি দেবার। ফাঁসি তো অনেক দূরের কথা।
সেই ভীড়ে সবার অলক্ষ্যে আরো একজন খুশি হয়েছিল। গগনের ঠাকুমা। তাঁর সাধের বংশপ্রদীপটি
চিরদিনের মতো নিভে যাবার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। স্কুলের নূন্যতম পরীক্ষায় পাশ
করতে পারেনি বলে গগন সেই সার্টিফিকেট কবেই কোথায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল, সে নিজেও
জানতো না। কিন্তু সেই একটুকরো কাগজই যে তাকে একদিন অবশ্যম্ভাবী ফাঁসির হাত থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে
বাঁচিয়ে দিতে পারে সে কোনদিন ভাবে নি।
**
হরিহর আর দাঁড়ালেন না। জঙ্গলের ভেতর লম্বা লম্বা গাছগুলোর পাতা থেকে চুঁইয়ে
চুঁইয়ে নামছে রাত। এবার রাত গভীর হবে। পৃথিবীর সমস্ত জীব আস্তে আস্তে শান্ত হবে,
ঘুমিয়ে পড়বে। কিন্তু হরিহর? রাতের পর রাতের মতো ঘুম আসবে না তাঁর চোখে। কখনো চোখের
পাতাদু’টো জুড়ে গেলেও কি এক আতঙ্কে ধড়ফড়িয়ে জেগে উঠেন। শূন্যদৃষ্টিতে কড়িকাঠের দিকে
তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একসময় ভোর হয়ে আসে।
তিনি পাহাড়ের ঢাল ধরে নেমে এলেন। চাঁদের আলোয় দূর থেকে শীর্ণ নদীটাকে এক টুকরো
অগোছালো সাদা কাপড় পড়ে থাকার মতো লাগছিল। শীত পড়তেই এ নদীতে জল থাকে না। নদীর ওপারে, পাড় থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে, সামান্য উঁচু
একফালি জমিতে হিমানীদের মতো আরো জনা দশেক পরিবার ঘেঁষাঘেঁষি করে থেকে আসছে কয়েক
প্রজন্ম ধরে। কিন্তু নদী পার হয়ে কয়েক পা এগিয়ে পাশের গ্রামের সীমানা পর্যন্ত
যাবার অধিকার কিংবা সাহস তারা আজও অর্জন করতে পারেনি। আধা-অন্ধকারে হরিহর সাইকেলটা
ঠেলতে ঠেলতে কিছুটা আন্দাজ বশেই সেই দিকে এগোতে থাকলেন।
ভিজে বালিতে পা ডুবে না গেলেও, মাঝে মাঝে জুতোটা আটকে যাচ্ছিল। এরমধ্যেই
আশপাশের চারিদিক শুনশান হয়ে এসেছে। হিমানীদের বাড়ির চৌকাঠের কাছাকাছি আসতেই হরিহর
অনুভব করতে পারলেন তার পা দু’টো যেন গাছের শেকড়ের মতো গেঁথে যাচ্ছে মাটিতে। মাথাটা
ঘাড় থেকে ক্রমশ আরো ঝুলে পড়ছে। তিনি চাইলেও যেন শরীরটাকে এক ইঞ্চিও টেনে নিয়ে যেতে
পারছেন না। তিনবছর জেল খেটে গগন আজ বাড়িতে ফিরে গেছে। গগনের সাজা ঘোষণা হবার দিন
থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক, অনেকবার হিমানীদের এই ঘরের দরজা পর্যন্ত এসেও হরিহর
ফিরে গেছেন। তবু চৌকাঠ ডিঙিয়ে হিমানীদের বাড়িতে ঢোকবার মতো সাহসটুকু কিছুতেই জোগাড়
করতে পারেন নি। কিন্তু আজ তাকে হিমানীদের বাড়ি আসতেই হতো। যেভাবেই হোক আজ হিমানীর
সামনে তাঁকে দাঁড়াতেই হবে। যতই অপমানের মুখোমুখি হতে হোক না কেন। সেই কথা ভাবতেই চৌকাঠে
পা রেখেই হরিহর যেন একদম কুঁকড়ে গেলেন। তবুও আজ নিজেই নিজেকে জোর করে ঠেলে হিমানীদের
উঠোনে এসে দাঁড় করালেন।
বাড়িতে তাঁকে ঢুকতে দেখেই হিমানীর বাবা হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এলেন। গত কয়েকবছর
যে হরিহরকে তারা দেখতে পায়নি, সেই তিনি এখন উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। সাইকেলটাকে গোয়ালের
খুঁটিতে দাঁড় করিয়ে হরিহরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হরিহর কিন্তু কিছুতেই মাথাটাকে সোজা
করতে পারছিলেন না। মনে হচ্ছিল মাথাটা ঝুঁকতে ঝুঁকতে এক্ষুনি তার নিজেরই পায়ে গিয়ে
ঠেকবে। এই লজ্জা সে কোথায় ঢাকবে। তবু আজ তাকে এখানে আসতেই হতো। হিমানীর সামনে
দাঁড়াতেই হতো। সে যতই কষ্টকর হোক না কেন।
হরিহরের হটাৎ উপস্থিতি বাড়ির বাকিদেরও মূহুর্তের মধ্যে তটস্থ করে দিল। একটা
ছোট কেরোসিনের কুপির আলোয় হিমানীর মা হিমানীর চুল বেঁধে দিচ্ছিলেন। হরিহরের
উপস্থিতি টের পাওয়ামাত্র তিনি কোনরকমে আঁচলে মুখ ঢেকে ত্রস্তে ঘরের ভেতর ঢুকে
গেলেন। হিমানীও উঠে যাবার জন্য দাঁড়াতেই, হরিহর কাঁপা গলায় বললেন, “মা, আমি আজ তোমার
কাছেই এসেছি, একটু কথা ছিল তোমার সঙ্গে।”
হিমানী দাঁড়িয়ে পড়তেই হরিহর মুখ তুলে তাকালেন। সেই স্বল্প আলোতেও হরিহর দেখতে
পেলেন চোখের নীচে ভুসিকালির মতো গভীর কালো অন্ধকারের মধ্যেও হিমানীর চোখদুটো যেন এক
মূহুর্তের জন্য দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুধারার পথ ধরে চোখের কোণ
থেকে মুখের কাঠিণ্য ছড়িয়ে পড়ল সারা দেহে। হিমানীর মনে হলো হাজার হাজার ভোল্টের
বিদ্যুৎপ্রবাহ তার শরীরটাকে যেন মাঝবরাবর চিরে দিয়ে মাটিতে ঢুকে যাবার আগে তাকে
সেদিনের মতোই ঝন্ঝন করে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। কয়েক মূহুর্তেই তিনবছর আগেকার সেই প্রতিটি
পল-অনুপলের যন্ত্রণাদীর্ণ সময়টা তার শরীরে ফিরে এলো। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না সে।
পায়ের নীচের মাটিটা যেন চোরাবালির মতো দু’পাশে সরে যাচ্ছে। হাত
বাড়িয়ে কোনরকমে পাশের দেওয়ালটাকে ধরে ফেলল। “আমার সাথে?”
“হ্যাঁ মা, তোমার সাথে কথা না বলে তো আমি যেতে পারি না আজ।”
হিমানীর পাদু’টো অসম্ভব কাঁপছিল। দেওয়াল ধরে ধরে সেখানেই বসে পড়ল।
“আমার সাথে আর কথা বলে কি হবে মাষ্টারমশাই। আপনার ছেলে তো আজ ঘরে ফিরে গেছে।”
হিমানীর বাবা পাশে দাঁড়িয়ে হরিহরকে দেখছিলেন। হিমানীর কথা শেষ হতেই দেখলেন মাষ্টারমশাইয়ের
মুখখানা যেন আরো কালো হয়ে গেল। অপমান, ধিক্কার আর ভৎসনা পেয়ে পেয়ে নির্বিবাদী মানুষটা
এই কয়েকটা বছরে যেন একটা কঙ্কালের উপর জড়ানো চামড়ার চলমান মূর্তি ছাড়া আর কিছুই নন।
অথচ এই মানুষটাই নিজের উদ্যোগে কতকিছু করেছেন। নিজের গ্রাম ছাড়াও আশপাশের সবার
প্রয়োজনে পাশে থেকেছেন। আজ সেই মানুষটার ক্লিষ্ট স্বরে কোন ভাষাই নেই। হিমানীর
বাবা হরিহরের হাত ধরে উঠোনের চাতালে বসিয়ে দিতে দিতে বললেন, “মাষ্টারমশাই, আপনার শরীরের
এ কি হাল হয়েছে?”
হরিহর কেমন যেন মরা মাছের দৃষ্টিতে হিমানীর বাবার দিকে তাকালেন। হিমানীর
দিকেও। হিমানী সেই দৃষ্টিতে দেখল একটি মৃত চোখ। এক চরম ক্লান্তি সেই দৃষ্টিতে পাকাপাকি
জায়গা করে নিয়েছে। একটা জীবন্ত শরীরের ভেতর দিনের পর দিন একটা মৃত আত্মাকে বয়ে
বেড়াবার ক্লান্তি। সে চোখে আলোর লেশমাত্র নেই, নেই দৃষ্টি, তিনি যেন জগতের দিকে
তাকিয়ে আছেন শ্মশানের মাঠে উড়ে বেড়ানো ছাইয়ের মতো ধূসর চোখে।
দেওয়াল ধরে ধরে হিমানী মাষ্টারমশাইয়ের পাশটিতে এসে বসলো। তার মনে পড়লো, একদিন সাতসকালে,
পোস্টঅফিস যাবার পথে, এই মানুষটাই বাড়ির ভেতর সটান এসে তুলসি বেদীতে বসে পড়েছিলেন।
হিমানীর বাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “এই বসলুম, আজ তোদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে না
পাঠিয়ে আমি এখান থেকে নড়ছি না।” হিমানীর বাবা যারপরনাই অস্বস্তি আর ভয়ার্ত চোখে
তাকিয়েছিল মাষ্টারমশাইয়ের দিকে। সেদিনের আগে মাষ্টারমশাইয়ের মতো উচ্চবর্ণের কেউ
তাদের চৌকাঠ মাড়ায় নি। সেই তিনি কিনা সোজা উঠোনে এসে বসে পড়েছেন! শঙ্কিত চোখে
তাকিয়েছিল রান্নাঘরের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা হিমানীর মায়ের দিকে। স্পষ্ট
দেখেছিলেন দারিদ্রের ভারে ন্যুব্জ এক মায়ের চোখে মেয়ের জন্য অন্য এক ভবিষ্যতের
স্বপ্ন। মাষ্টারমশাইয়ের সেই জেদের জন্যই হিমানীর মতো এই প্রান্তিক পরিবার থেকে কেউ
স্কুলের গন্ডি মাড়িয়েছিল প্রথমবারের জন্য। হিমানী আবার একবার মাষ্টারমশাইয়ের দিকে
তাকালো। সেদিনের সেই মানুষটার সাথে আজ তার সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে থাকা এই মানুষটার
কোন মিলই নেই। মাষ্টারমশাইয়ের শালপ্রাংশু বিশ্বাসের সেই মহীরুহকে কে যেন কুরে কুরে
খেয়ে ফাঁপা করে দিয়েছে ভেতর থেকে।
হিমানীর শীত করতে লাগল। চাদরটাকে গায়ে হাল্কা করে জড়িয়ে বলল, “বলুন
মাষ্টারমশাই।”
হিমানীর কথা শেষ হবার আগেই হরিহর দু’হাত মুখে চাপা
দিয়ে হাউ-হাউ করে কেঁদে উঠলেন। তার ক্ষীণ শরীরটা অবদমিত কান্নার অভিঘাতে ভয়ানকভাবে
কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকল। যেন এতদিনের অবরুদ্ধ কান্না হড়কা বানের মতো তার
অস্তিত্ত্বটাকেই ধুয়ে মুছে শেষ করে দিতে চাইছে আজ।
“মাষ্টারমশাই” –
হিমানীর নিজের স্বর নিজেই চিনতে পারছিল না। নিজেই বুঝতে পারল এ স্বরে যেন কোন
ভাষা নেই। শুধু কয়েকটা শব্দের সমষ্টিমাত্র। ভাষাগুলো কবেই তার মাথা থেকে বিলুপ্ত
হয়ে গেছে চিরদিনের মতো। আর আধপোড়া, ছিন্নভিন্ন স্মৃতিগুলো যেন ইতিহাসের প্রাচীন
লিপির মতোই আবছা, দুর্বোধ্য।
হরিহর প্রাণপনে চাইলেও মাথাটা তুলতে পারছিলেন না। মাথাটা যেন জগদ্দল পাথরের
মতো ঘাড়ের উপর চেপে বসে আছে। শতযুগ আগের হেরে যাওয়া একটা মানুষের গলা থেকে বেরিয়ে
এলো, “আমাকে কি ক্ষমা করতে পারবি মা?”
হিমানী অনেকক্ষণ থেকেই নিজেকে বেঁধে রাখতে চাইছিল। আর পারল না। হরিহর দেখলেন, হু-হু
করে বাঁধভাঙ্গা জল নিঃশব্দে গাল বেয়ে যেতে লাগল। এত অশ্রু মানুষের চোখে থাকে? এত যন্ত্রণা
মানুষ তার বুকে জমিয়ে রাখতে পারে? একটা নিস্পাপ উনিশ বছরের হৃদয়? নাকি সেই নিস্পাপ
শরীরটাকে যখন কিছু পিশাচ দুমড়িয়ে-মুচড়ে-পিষে তাদের পৈশাচিক আনন্দ নিংড়ে নেয়, তখনই কি
কোন অশ্রুর সমুদ্র সেই বুকে পাকাপাকি স্থান করে নেয়?
“সবাই তো শাস্তি পেল না, মাষ্টারমশাই।”
শব্দগুলো যেন জ্বলন্ত তরল সীসার মতো ছুটে এসে হরিহরের কানের ভেতর আছড়ে পড়ল। কি এক অভিশাপে তিনি তো এতদিন স্তব্ধ হয়েই আছেন শালগ্রাম শিলার মতো।
কতক্ষন যে সবাই সেখানে ঐ ভাবে বসেছিলেন জানা নেই। হিমানী ধীরে ধীরে হরিহরে
পায়ে হাত ছোঁয়াল।
হরিহর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হবার মতো চমকে উঠলেন। মনে হলো অনেক যুগ পরে প্রাণ ফিরে
পেলেন কোন এক অহল্যার স্পর্শে। বললেন, “মা, আজ আমি শাপমুক্ত হলাম।” আস্তে আস্তে
মুখ তুলে একবার হিমানীর দিকে তাকালেন আর একবার আকাশের দিকে তাকালেন। পরিস্কার
রাতের আকাশ জুড়ে তখন নক্ষত্রের ফুলঝুরি। বললেন, “মা, তুই নিশ্চিত থাক, পৃথিবীকে
শাপমুক্ত করার দায়িত্ব এবার আমার। শুধু আমার।”
শব্দগুলো হিমানীকে স্পর্শ করলো না। কিছুই বুঝতে না পেরে সে শুধু হরিহরের দিকে
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। সেই অন্ধকার বারান্দায় ওই একটি মাত্র তেলের কুপির
আগুনের জ্বলন্ত শিখা তাদের দু’জনের চোখের মণিতেই প্রতিবিম্বিত হতে লাগল।
হিমানীর চোখের আগুনে হিমানী নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার উত্তাপ খুঁজে নিতে চাইছে আর
হরিহর যেন নিজেকে পুড়িয়ে শুদ্ধ করতে নিতে চাইলেন।
**
তখন মধ্যরাত। গ্রামে গঞ্জে রাত দু’টো মানে অনেক রাত। হিমানীদের বাড়ি থেকে ফিরে
হরিহর যখন বাড়িতে পৌঁছানোর পরেও বাড়ির কেউ তাঁর সাথে কোন কথা বলে নি। তিনিও
চাইছিলেন না। সাত-তাড়াতাড়ি খাইয়ে-দাইয়ে বাড়ির লোক গগনকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। হরিহর
কিছু জানতেও চান নি। তিনি শুধু নির্বাক, নিস্তব্ধ হয়ে উঠোনের একপাশে বসেছিলেন। বাড়ির
কেউ তার কাছেও আসেনি।
সবাই রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে নিজের নিজের ঘরে চলে গিয়েছিল। হরিহর তখনো সেখানেই
বসে ছিলেন। সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর সে গগনের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
ঘণ্টাখানেক পরে হরিহর বাড়ির খিড়কির দরজা ঠেলে রাস্তায় বেরিয়ে এলেন। দরজাটা
ঠেসিয়ে দিতেই ক্যাঁচ করে শব্দ হলো। কিন্তু সেটা কারো শোনার কথা নয়। বাড়িতে সবাই তখন
গভীর ঘুমে।
ডানহাতের লাঠিটার উপর ভর দিয়ে টলোমলো পায়ে হাঁটতে থাকলেন। ঘাসের উপর নিঃশব্দে
পড়তে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো জুড়ে গিয়ে জলের শরীর পেয়েছে। পায়ের পাতা ভিজে যাচ্ছে।
আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালেন। এখনো চাঁদের আলোয় চারিদিক বেশ ঝলমলে। রাস্তার বাঁক
ঘোরার আগে আবার একবার পেছন ফিরে বাড়িটার দিকে তাকালেন। হরিহর জানেন এটাই শেষবারের
মতো দেখে নেওয়া। কোন কষ্ট অনুভব হচ্ছিল না। বাঁ হাতে ধরা চটের থলিটার দিকে একবার তাকালেন।
তারপরেই হন্হন করে হাঁটতে থাকলেন। এখন তাকে অনেকটা হেঁটে যেতে হবে। এই আধা চাঁদের
আলোয় পাহাড়ী রাস্তা ধরে।
হরিহর থানার সামনে এসে পৌঁছলেন। আশপাশের দশ-বারোটা গ্রামের জন্য এই একটাই
থানা। দরজার সামনে একটা চেয়ারে বসে একজন সেপাই ঘুমে ঢুলছে। তিনি সোজা থানায় ঢুকে পড়লেন।
হাতের লাঠিটাকে দরজার কোনায় দাঁড় করিয়ে রাখলেন। সেপাইয়ের ঘুম ভেঙে গিয়ে দৌড়ে সে এসে
হরিহরের সামনে এসে দাঁড়াতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। হরিহরকে না চেনার কোন কারণ
নেই, বরং আজকাল সবাই বেশী বেশী চেনে। অবাক হয়ে বলল, “মাস্টারজি আপ? আভি ইস্
ওয়াক্ত?”
হরিহর তার দিকে তাকালেন কিন্তু কোন জবাব দিলেন না। সোজা ছোটবাবুর টেবিলের
সামনে এসে একটু ঝুঁকে দাঁড়ালেন। ছোটবাবু বোধ হয় ঘুমিয়েই পড়েছিলেন। হরিহরকে ঢুকতে
দেখে পাশের চেয়ার থেকে একজন কনস্টেবল উঠে দাঁড়াল। সেপাইও এসে ছোটবাবুর টেবিলের অন্য
পাশে এসে দাঁড়ালো। হরিহর সামনে এসে দাঁড়াতেই ছোটবাবু ঘুম চোখে জিজ্ঞেস করলেন, “বাত্
কেয়া হ্যায় মাস্টারজি? ইতনি রাত? বেইঠিয়ে ইধার...”
হরিহর দাঁড়িয়েই রইলেন। হাতের ব্যাগখানা চেয়ারের পাশে নামিয়ে রাখলেন। স্পষ্ট
স্বরে বললেন, “আমাকে গ্রেফতার করুন দারোগাবাবু...”
“কেয়া?” ছোটবাবু এবার চোখ কচ্লে সোজা হয়ে বসলেন। “বাত্ কেয়া হ্যায়, কিস্কো
অ্যারেস্ট কর্না হ্যায়?”
- আমাকে।
- কিঁউ? অ্যারেস্ট কিঁউ?
- গগন মরে গেছে।
- গগন কৌন হ্যায়? ক্যায়সে মর গেয়ে?’
- আমি ওকে চরম শাস্তি দিয়েছি।
এবারে ছোটবাবুর ঘুম ছুটে গেল। বলছে কি মাস্টারজি! ছোটবাবু ঘাড় ঘুরিয়ে কনস্টেবলের
দিকে তাকাতেই সে সেই একই বিহ্বল দৃষ্টি ফিরিয়ে দিল। জিজ্ঞেস করল, “আপ কেয়া কহে
রাহা হ্যায় মাস্টারজি?”
হরিহর কনস্টেবলের দিকে না তাকিয়ে সোজা ছোটবাবুর দিকে চোখে চোখ রেখে তাকালেন। “আমি
গগনকে শাস্তি দিয়েছি... আমাকে গ্রেফতার করুন”।
ছোটবাবুর গলা এবার কিছুটা কড়া। বলল, ‘গগন হ্যায় কৌন?
কিধার্ রহেতা হ্যায়?’
হরিহর এবার যেন কেমন থম্ মেরে গেলেন। পাশ থেকে সেপাই বলল, “মাস্টারজিকা লেড়কা।”
“কেয়া?” ছোটবাবু প্রচণ্ড আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠলেন। “আপ কেয়া কহে রহে হ্যায়,
মাস্টারজি?”
বেশ কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ। সবাই সবার দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছে না। ঘটনার
আকস্মিকতায় রাইফেলটা হাতে নিয়ে সেপাই ততক্ষনে টলমল করতে শুরু করেছে। কনস্টেবলও আর
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। হরিহরের পাশের চেয়ারটাকে শক্ত করে ধরে
দাঁড়ালেন।
ছোটবাবুই আবার কথা শুরু করলো, ‘কিঁউ মারা? লাশ্
কিধার হ্যায়?’
এখনও কোন কথা নেই হরিহরের মুখে। সেপাই আর কনস্টেবল, দুজনেই কিছু একটা নির্দেশের
আশায় ছোটবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছোটবাবুর মুখখানা তখন সাদা ছাইয়ের মতো
ফ্যাকাশে। মাথাটা উঁচু করে থানার চার দেওয়ালের দিকে চোখ ঘোরালেন। একে একে সেপাই আর
কনস্টেবলের দিকে তাকালেন। কিন্তু কি বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।
‘এখানে...’ - হরিহরের গলার স্বরে তারা তিনজনেই টেবিলের দিকে তাকাতেই
দেখল, সেই ব্যাগটার ভেতর থেকে হরিহর চুলের মুঠি ধরে গগনের কাটা মুন্ডুটা টেবিলের
ওপর নামিয়ে রাখল...খুব আস্তে আস্তে...
ভয়ঙ্করভাবে হাত-পা কাঁপতে কাঁপতে সেপাইয়ের হাত থেকে রাইফেলটা মাটিতে পড়ে গেল।
ছোটবাবু তড়া্ক করে চেয়ার ছেড়ে স্প্রিং-এর মতো উঠে দাঁড়িয়ে পাথরের মূর্তির মতো
স্থির হয়ে গেলেন। আর এতক্ষণ চেয়ারের হাতল ধরে কোনরকমে দাঁড়িয়ে থাকা কনস্টেবল কাটা
কলাগাছের মতো ধপাস্ করে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
থানার ওই ছোট্ট ঘরখানার নৈঃশব্দ্য থানার বাইরের নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতাকে তখন পাল্লা
দিচ্ছে সমানে সমানে।
হরিহর আস্তে আস্তে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। খুব ধীরে ধীরে গিয়ে দরজার কাছ
থেকে লাঠিটা নিলেন। থানার দরজার কাছে আসতেই দেখলেন পুব আকাশের এক কোণায় লাল আভা ফুটে
উঠছে। কিন্তু লাঠিটা একটু উঠিয়ে চৌকাঠের ওপারে ঠেকানোর আগেই দরজায় মাথাটা ঠুকে গেল।
হাত থেকে লাঠিটা ছিটকে যেতেই তিনি কাত হয়ে পড়ে গেলেন।
ভোরের প্রথম আলো দরজার এপার-ওপার আধাআধি পড়ে থাকা হরিহরের প্রাণহীন শরীরটাকে
ডিঙিয়ে থানায় ঢুকল।
প্রকাশিতঃ boisoi: বিষদাঁত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন