
তবে এই রকম ঘটনা শুধুমাত্র এই কলকাতা শহরের সমস্যা নয়।
এদেশের প্রতিটি ছোট-বড় শহরেই এটি একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু যদি জিজ্ঞেস করা
হয় মানুষের ভাল বন্ধু কে আছে? একবাক্যে সারমেয়র নাম প্রথমে আসবেই আসবে। অন্যদিকে
আমাদের প্রত্যেকেরই রাস্তার কুকুরের তাড়া খেয়ে পড়িমরি করে দৌড়ানোর কিংবা কামড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা
আছেই আছে। আমাদের দেশের সর্বত্রই আছে। কেরালাতেও আছে।
এদিকে কেরালা ভ্রমণপিপাসুদের
স্বর্গরাজ্য। অন্যদিকে দিনের পর দিন সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে বিদেশী পর্যটকদের কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে আসার ভিড় বেড়েই চলেছে। তাই কুকুরের কামড় খেয়ে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভোগান্তির সমস্যায় জর্জরিত
কেরালা সরকার এবার একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে সাপও মরে অথচ লাঠিও না ভাঙ্গে।
আর সেই উদ্যোগটা নিয়েই ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। গতবছর এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আন্দোলনও হয়েছে। সমস্যা নিয়ে দু'পক্ষের বাদানুবাদ আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে।
খবরে প্রকাশ, কেরালার এক পঞ্চায়েত
রাস্তার কুকুরদের ধরে সোজা চিনের ইউলিনে রপ্তানী করার কথা ভাবছে। চীনের ইউলিন প্রতি বছর জুন
মাসে বাৎসরিক ‘কুকুর মাংস’ উৎসবের জন্য পৃথিবী
বিখ্যাত। অতএব এক ঢিলে দুই পাখি। সমস্যার সমাধান হলো, সাথে
উপরি রোজগার।
সেই উৎসবটাই বা কি! কুকুরগুলোকে
নিয়ে তারা কি করবে? কুকুরগুলি সেই উৎসবে ক্ষুধার্ত চৈনিক
জনগণের খাদ্য হবে। সারমেয় মাংসের দারুণ সব সুস্বাদু খাবারে রসনা তৃপ্ত হবে উৎসবে যোগ দিতে আসা উপছে
পড়া স্থানীয় মানুষ ও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের। উৎসবের বক্তব্য, হতেই পারে। পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন ধরনের অজস্র প্রাণীকুল অধিকাংশ
দেশেই বিভিন্ন খাদ্য তালিকায় আছে।
তাহলে ওই উৎসবের বিশেষত্বটা কি! আর কেনই বা এতো বিক্ষোভ-আন্দোলন পৃথিবী জুড়ে? আসলে ইউলিনে
কুকুরদের হত্যা করা হয় অত্যন্ত নিষ্ঠুর পদ্ধতিতে ও যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে। যাতে সেই
খাদ্যকে সুস্বাদুতম করে তোলা যায়।
আর এখানেই পশুপ্রেমী তথা দেশবাসীর আপত্তি। তাছাড়া এই সিদ্ধান্ত এদেশের ১৯৬০ সালের পশু কল্যাণ আইনের পরিপন্থী। বহুদিন ধরেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কুকুরের উৎপাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য অনেক গ্রহণযোগ্য ও মানবিক সমাধানের প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে। তার পরেও কি রাজ্যস্তরে কিংবা কেন্দ্রীয়স্তরে, সেগুলোর বাস্তবায়ন ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে কুকুরের কামড়ের সমস্যাটাও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যাবে, গত এক
বছরে কেরালায় এক লাখেরও বেশী লোক কুকুরের কামড়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তাই বলে এই অমানবিক
পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করাটাও কোন কাজের কথা নয়। এছাড়াও যে অনেক মানবিক পথ আছে সেটা অবশ্য
সবারই জানা। বিশেষ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ জায়গায় তাদের পুনর্বাসন। এবার তাই সারমেয়প্রেমী আর কুকুরের কামড়ে ভুক্তভোগী জনগন, সব পক্ষেরই নতুন
করে ভাবার সময় এসেছে।
সূত্রঃ
http://www.indiatvnews.com/news/india/stray-dog-meats-to-be-exported-to-china-53263.html
http://www.nytimes.com/2015/06/24/world/asia/dog-eaters-in-yulin-china-unbowed-by-global-derision.html?_r=0
1 টি মন্তব্য:
এই নিষ্পাপ সারমেয়েরা মানব প্রজাতিকে প্রতি মেনেছে প্রাভু বলে, দেখিয়েছে আনুগত্য, নিয়েছে বন্ধু বা আপনজনের স্থান, বাড়িয়েছে সাহায্যের হাত । বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ; মানুষ কি পারবে সেই ঋণ পরিশোধ করতে তাদের বনে ফিরিয়ে দিয়ে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন