টাকা মাটি, মাটি...

সময়ঃ ৮ই নভেম্বর, ২০১৬, রাত ৮টা -

আজ রাত ১২টার পর থেকে হঠাৎই ৫০০ আর ১০০০ টাকার বড় বড় নোটগুলো সাদা কাগজ হয়ে গেল। দেশের যতো চোর, ছ্যাঁচোড় আর কালা-ধনের কারবারিদের মাথায় হাত। মোদীভাই একি করলেন! কাকপক্ষীতে ঘুণাক্ষরে জানতেও পারলো না! দশভরি সোনার চেন আর বি-এম-ডব্লু নিয়ে ঘুরে বেড়ানো টাকার কুমীরদের ঘুম ছুটে গেল। সিন্দুকে গুছিয়ে রাখা তাড়া তাড়া কড়কড়ে পাঁচশো-হাজার টাকার নোটগুলো কয়েক ঘন্টায় স্রেফ হাতমোছার ন্যাপকিন কিংবা ছোলা-বাদামের ঠোঙা হয়ে গেল। 

অবশ্য জ্বালানী গ্যাসের খরচা কমে গেল। একটা মাটি-লেপা তোলা উনুন কিনে ওই নোটগুলো পোড়ালে খরচও বাঁচবে আর মোদী সরকার জানতেও পারবে না। কিংবা বিদেশে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার কালো-ধন এক নিমেষে কর্পুরের মতো উবে গেল। বছরের পর বছর তিল তিল করে গড়ে তোলা হাওয়ালা সাম্রাজ্য তাসের দেশের মতো এক নিমেষে ধূলিসাৎ!

কেউ কেউ বলছেন সাহেবের বুকের পাটা আছে। কথাটা বিরোধীরা কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না। সে এ রাজ্যের দাদা-দিদিরাই হোক আর কেন্দ্রে লাট্টুর মতো ঘূর্নায়মাণ ছন্নছাড়া বিরোধীরাই হোক। কেউ বলছেন “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক”। আগেরবার বিদেশী শত্রুর কোমর ভেঙ্গে দিয়েছিল। আর এবার “দেশোয়ালী” শত্রুদের শিরদাঁড়াটা কেমন ঝুরঝুরে হয়েছে সেটা বুধবারের সকালে শেয়ার মার্কেট খোলার সাথে সাথেই বোঝা যাবে। রক্তবন্যা বয়ে গেলেও অবাক হবার কিছু নেই। আধধন্টার মধ্যে কর্তারা কাজকর্ম বন্ধ করে হাত তুলে “হরিবোল, হরিবোল” করলেও আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না। তবে কালকেই কাবাডি খেলতে নেমে গেলে কপালে বহুত দুঃখ আছে। পরশু কিংবা তারপরের দিন দাঁত দিয়ে চেবানোর মতো আঙুলের নখ কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তাই, ধীরে বৎস ধীরে...

তবে চোঁয়া ঢেঁকুর তোলা মাঝারি সাইজের ছাঁচি কুমড়োর মতো ভুঁড়ি বাগানো মধ্যবিত্ত আর তাঁদের গৃহিনীদের জন্য সুখবর থাকলেও থাকতে পারে। সোনার রঙটা হলদেটে থাকলেও দামটা কিছুটা দক্ষিণমুখী হলেও হতে পারে। তবে আপনাদের এখন আর লক্ষীর ভাঁড় ভেঙে কোন লাভ হবে না। সেখানে জমানো পাঁচশো-হাজারের নোটগুলি ততক্ষণে তামাদি হয়ে গেছে। দু'একটা রেখে দিতে পারেন। নাতির নাতি কিংবা তার নাতি নিলামে বিক্রি করতে পারে। আর সকাল হলে সোনার দোকানে লাইন দিতেই পারেন। তবে আর আগে যে ব্যাঙ্কে লাইন দিতে হবে রাত ভোর হবার আগে থেকে।

একবার ভাবুন তো কত কষ্ট হচ্ছে দেশজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর মালিকদের কথা ভাবলে। বেচারাদের “ক্যাপিটেশন ফি” নেওয়া কাঁড়ি কাঁড়ি নগদ টাকা লোহার সিন্দুক কিংবা তোষকের মধ্যে গোঁজা ছিল হয়তো। সেগুলো সব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের “ছাপানো” রঙিন কাগজ হয়ে গেল গা! হারামজাদারা একটু সময় পর্যন্ত দিল নি! কিংবা ভাবুন তো যার কাছ থেকে কিছুদিন আগে আপনার স্বপ্নের ফ্ল্যাটটি কিনেছেন। রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য ১% “নজরানা” নগদ কড়কড়ে টাকায় দিতে হয়েছিল তো! না হলে আপনার ফ্ল্যাটটা সরকারি সীলমোহর পাচ্ছিল না। আপনার এক মাসের মাইনে সেদিন স্রেফ জলে গিয়েছিল। আর আজ সেই বিল্ডারের কি অবস্থা হচ্ছে জানেন? সে বেচারা টাকাগুলো ব্যাঙ্কেও জমা রাখতে পারে নি আবার বিমানবন্দর থেকে বেরোবার মুখে যে দালালেরা “ডলার” বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে ডলার কিনে আমেরিকা যাবার স্বপ্নটাও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।

তবে এটাই প্রথম এমন “অর্থনৈতিক বিপ্লব” নয়। বিংশ শতাব্দীতেও হয়েছিল। সেটা প্রায় ২৫ বছর আগে। যখন সরকার হঠাৎই একদিন সোনা আমদানির শুল্ক কমিয়ে সোনার আমদানি অবাধ করে দিল। সেদিনের সেই বিপ্লবে এক নিমেষেই সোনার চোরাচালান ব্যবসা লাটে উঠে গিয়েছিল। বেচারা দাউদভাইকে পাকিস্তানে চলে যেতে হলো।

তবে এবারের এই সরকারি সিদ্ধান্ত কতজনকে যে ঘোল খাওয়াবে এখনই তার হিসেব করা মুস্কিল। তবে দীপাবলিতে পুলিশ বাজি পোড়াতে দেয় নি বলে দুঃখ পুষে রাখবেন না। বাতিল “পাঁচশো-হাজার” টাকা পোড়ানোর আগুনে যে দীপাবলি শুরু হতে চলেছে, তার ধোঁয়ায় দিল্লির মতো অন্য শহরগুলোর মুখ ঢেকে গেলে আবার কিন্তু নাকে রুমাল চাপা দিতে হতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই: