স্ফুলিঙ্গ

তখন সবে সন্ধ্যা হয়েছে। ইন্দ্রপ্রস্থ গ্রামের শেষ প্রান্তে দিগন্ত বিস্তৃত এই জঙ্গলটা বেশ বড় আর গভীর। যত দিন গেছে ততই বাসিন্দার সংখ্যা বেড়েছে। তাই জঙ্গলের আয়তন কমছে। মানুষজন আসে না বললে ভুল হবে, তবে পারতপক্ষে এড়িয়ে চলে। কারণটা আর কিছুই না। জঙ্গলে মধ্যে জঙ্গলের রাজত্ব চলবে না তো মানুষেররাজত্ব চলবে! কিন্তু সেটা ওই বড়-সড় মাথাওয়ালা, বুদ্ধির ঢেঁকি মানুষগুলোকে কে বোঝাতে যাবে?

আজ এখানে একটা জরুরি সভা বসেছে। গুপ্ত মন্ত্রণাকক্ষে। বেশ কিছুদিন ধরেই জঙ্গলের রাজত্বে গোলমাল লেগেই থাকে। বনবিড়াল আর বুনো কুকুর - একে অন্যকে তাড়া করে, খাঁমচা-খেমচি করে, মারপিট করে। বলা নেই, কওয়া নেই, ভালুকের দল শেয়ালের বাড়িতে হামলা করে পাকা আঙ্গুর খেয়ে আসে। শেয়াল বেচারা গাছ থেকে আঙ্গুর পাড়তেও পারে না অথচ নালিশ করতেও ছাড়ে না যে ভালুক টক আঙ্গুর পেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু সেই সব গোলমাল বেশীক্ষন স্থায়ী হয় না, বেশী দিন তো নয়ই। কারণ এই যে বনের জনগণের বুদ্ধি-শুদ্ধি চিরদিনই কম। ঠাণ্ডা জলের তাপমাত্রার থেকেও কম। তাদের নিজেদের মাথার আকার অনুযায়ী বুদ্ধি যেমন থাকার তেমনই আছে। গরু-মোষেদের কথাই ধরোশেয়ালের মাথার থেকে বড়, তাই বুদ্ধিও একটু বেশীসেইজন্য সে বনে না থেকে মানুষের সাথে থাকেমানুষের বাচ্চারা তাদের পোষে। থাকা-খাওয়ার ভাবনা নেই। তবু সারাজীবন গলায় দড়ি পরিয়ে পোষ মেনে থাকা পোষায় নামানুষেরা সব বড্ড সেয়ানাযতদিন দুধ পায়, আদর-যত্ন করেযেই বুড়িয়ে গেল, কেউ কেউ কেটে খেয়েও নেয়সেজন্য হাতি, গণ্ডার, শেয়াল এরা কেউ মানুষের কাছে থাকে না। শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি খায় আর পাড়ে অশ্বডিম্ব। মানুষের বাচ্চা পুষবে কেন?


আজ মন্ত্রীসভার মন্ত্রনাঘরে জরুরী বৈঠক বসেছে একটা জরুরী বিষয়ে আলোচনার জন্য। সেখানে আছেন সিংহমশাই তিনি দেশের রাজা। তাছাড়া আছেন তাঁর পারিষদেরা যেমন বাঘ-বাবু, তিনি মন্ত্রীসভায় দুই নম্বরএকটু গম্ভীর থাকেন আবার একটু তফাতেও থাকেন। ছোটখাট মন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা অন্যান্য অমাত্যবর্গের সাথে খুব একটা মেলামেশা করেন না। তাহলে তাঁর নাকি মর্যাদার হানি হয়। তাই খ্যাঁকশেয়াল, শেয়াল, হায়না, বুনোকুকুর, বনবেড়াল, নীলগাই এরা সবাই ওনাকে একটু সমঝে চলে ঠিকই তবে কিছুটা বাধ্য হয়েবাঘবাবুর গায়ের জোর বেশী আবার নখগুলো বেশ ধারালো। এর মধ্যে খ্যাঁকশেয়াল, শেয়াল, হায়না - মন্ত্রীসভায় এদের প্রতিনিধি আছে কিন্তু বাকিদের যেমন বুনোকুকুর, বনবেড়াল, নীলগাই কিংবা বুনো মোষ, এদের কোন প্রতিনিধি নেই কারন এরা কুকুর, বেড়াল আর গরুর জাত ছাড়া তো আর কিছু নয়।

কিন্তু সমস্যার শুরু অন্য জায়গায়। এর আগেও এই ব্যাপার নিয়ে ছোটখাট ঝামেলা হয়েছিল। মাঝে মাঝেই হয়। একবার বনবেড়ালের মিছিলে বাঘ-বাবু ঢুকে যাওয়ায় তার থাবায় তার কয়েকজন স্বজাতি মাসি খুব জখম হয়েছিল। কয়েকজনের দগদগে ঘা হয়েছিলো আর কিছু বনবেড়াল স্রেফ ভয়ে হার্টফেল করে মরে গিয়েছিল। মৃত্যুর পর এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হলে, যুক্তি উড়ে এসেছিল এই যে যাদের ঘা হয়ে গিয়েছিল সেটা তাদের দোষ। তারা কেন বাঘের কাছাকাছি এসেছিলতারা প্রোটোকল মানে নিবাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা তো হবেই। আর যারা ভয়ে হার্টফেল করেছিল এটা তাদের নিজেদের দোষ ছিল। কেন তারা দুর্বল হৃদ্‌যন্ত্র নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছিল।

এসব নিয়ে অনেকদিন ধরে আন্দোলন চলেছে। রাজপথে, অলিতে গলিতে, সভা-সমিতিতে। আজকাল ফেসবুক আর ট্যুইটারের জন্য সবাই দুরন্ত গতিতে খবর পেয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বুনোকুকুর, বনবেড়াল, নীলগাই-বাছুর মায় বনমুরগিগুলো পর্যন্ত পাটকাঠির মুখে আগুন জ্বালিয়ে মশাল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বাঘ-সিংহের পদত্যাগ দাবি করে। আরে বাবা, বাঘ আর সিংহদের তো তোরাই নির্বাচিত করে এনেছিস। তার জন্যই কিনা সিংহ বনের রাজা যদিও সে ঠুঁটো সিংহ। বাঘ-বাবুই বকলমে জঙ্গলের রাজত্ব চালায়। তাতে কার কি এসে যায় 

কে চালায় সে সব খবরে তোদের মতো ছোট ছোট জাতের পশুদের জেনে কি হবে? তোরা একবার নির্বাচিত করে ফেলেছিসব্যস, খেল খতম, পয়সা হজম। এরপর আমরা যতদিন ইচ্ছে রাজত্ব করব। কুকুর-বেড়ালের জাত আর গরুদের মতো বুদ্ধি। বলে কিনা, ওরা আবার জঙ্গলের নিয়মের পরিবর্তন করবে। যেন মোমবাতি নিয়ে মিছিল করলেই জঙ্গলের আইন পাল্টানো যায়। আরে বাবা, আইন পাল্টে তোদের ভালো করতে গিয়ে আমাদের নিজেদের ভূত-ভবিষ্যত লাটে উঠে যাবে না! দেবো একদিন তোদের লেজে ওই পাটকাঠির আগুন লাগিয়ে, বুঝবি সেদিন। জানিস তো বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা আর ফেউতে ছুঁলে বুঝবি কত ধানে কত চাল। বনে যে থাকিস, কত খাজনা দিস? হিসেব দিতে পারবি? কোথায় কি শিকার করিস, মানে রোজগার করিস, তার ঠিক মতো হিসাব দিস? বেশী করলেই ‘ফেউ’ লাগিয়ে দেব পেছনে...বুঝবি তখন।

কিন্তু আজকের সমস্যাটা একটু অন্য ধরনের। জটিল আর গভীর চিন্তার বিষয়। ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। সেদিন ছিল চাঁদনি রাত। অনেকদিন পরে এ বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল চাঁদনি রাত। বছরে একবারই গোটা চাঁদটা এত উজ্জ্বল হয়আর সেই রাতেই শুরু হয় জঙ্গলের উৎসব। সবাই অনেক রাত পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করে। এবারেও সেই হুল্লোড়ের কোন অন্যথা হয়নি। রাত বাড়তেই শেয়ালেরা সবাই ডাকতে শুরু করে দিয়েছিল। হুক্কা-হুয়া, হুক্কা-হুয়া। বনকুকুরেরা ঘেউ ঘেউ করে, বনবিড়ালেরা মিঁঊ-মিঁঊ। সেই রাতেই, তখন খুব বেশী রাত হয় নি, জঙ্গলের পাশ দিয়ে বড় রাস্তা ধরে যাচ্ছিল খ্যাঁকশেয়াল মন্ত্রীর ছেলে বাবু-খ্যাঁকশেয়াল আর তার কিছু সাঙ্গোপাঙ্গ। সঙ্গে কিছু কুচো-কাচা মন্ত্রীর ছেলেপুলেসূর্য ডোবার পর থেকেই তারা মহুয়া খেতে শুরু করেছিল। গত এক মাস ধরে ভালুকের দল রাজ্যের যত মহুল গাছ ছিল, মহুয়া জোগাড় করে রেখেছিল। এই চাঁদনি রাতের দিনে সবাই মিলে খাবে। শালা ভালুকের জাত, এই জেগে থাকে আর বলা নেই কওয়া নেই এই জ্বর আসে, তাদের কিছু ঠিক আছে নাকি? ওরা কি খ্যাঁকশেয়ালের পর্যায়ে পড়ে নাকি, যে মহুয়া খাবে। তাই বাবু-খ্যাঁকশেয়াল আর তার সাঙ্গোপাঙ্গ মিলে সেই মহুয়া কেড়ে নিয়ে খেয়ে নিয়েছে। তবে একটু বেশী খাওয়া হয়ে গিয়েছে। আর সেসব খেয়েই সবাই একটু বেসামাল।

রাস্তা দিয়ে যাবার সময় তারা দেখল দুজন শেয়ালীনী যাচ্ছে। বাবু-খ্যাঁকশেয়াল আর সাঙ্গোপাঙ্গদের তখন আর মাথার ঠিক ছিল না। মন্ত্রীর ছেলে ওরকম এক-আধটু করে। তাই বাবু-খ্যাঁকশেয়াল আর সাঙ্গোপাঙ্গরা মিলে ওই দুই শেয়ালীনীদুটিকে কব্জা করে সবাই মিলে একসাথে পাল্টাপাল্টি করে সুখ করে নিয়েছে। অনেকদিন পরে। বেশ ডবকা শেয়ালীনী। ঠিক থাকা যায়! আর সেটা জানাজানি হবার পর থেকেই জঙ্গলে শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভ-আন্দোলন।

কিন্তু এবার সেই ছোট্টসমস্যাটা মারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ওরা নাকি পাটকাঠির মুখে আগুন জ্বালিয়ে মশাল-মিছিল করতে করতে এগিয়ে আসছে। এই মন্ত্রনাসভার দিকে।

বাঘ, সিংহ, শেয়াল, খ্যাঁকশেয়াল, হাতি, ভালুক, বুনোকুকুর সবাই তখন সভায় উপস্থিত। ভালুকের একটু আগে আবার জ্বর এসেছিলজ্বর ছেড়ে যেতেই এখন সে তেড়েফুঁড়ে জেগে উঠে বলল, ‘বাঘমশাই, খ্যাঁকশেয়ালের বাচ্চা কিন্তু এটা ঠিক করে নি।

তাতে তোর কি রে ভালুকের বাচ্চা! তোর মহুয়া খেয়েছে তো! বেশ করেছে। ওই মহুয়া কি তো বাপের নাকি?’ খ্যাঁকশেয়াল মন্ত্রী দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে উঠল।

না, ওরা শেয়ালীনীদের উপর এরকম অত্যাচার করতে পারে না। ভালুক বলল

বেশ করেছে। শালা শেয়ালের জাত। যত্তসব ছোট জাতআমাদের খ্যাঁকশেয়ালদের উপর ছোট শেয়ালের জাত কবে কথা বলেছে, অ্যাঁ? এসব আমাদের খ্যাঁকশেয়ালদের জাতটাকে বদনাম করবার একটা ফন্দি বাঘমশাই। সব অপপ্রচার, কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছে। একদম কান দেবেন না।

বাঘ এতক্ষণ শোনার পর বসে থাকতে পারল না। খ্যাঁকশেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমার নেকড়ে-পুলিস কোথায় ছিল। তাদের তাড়াতাড়ি ঘটনাস্থলে যায় নি কেন?’

খ্যাঁকশেয়াল এবার কয়েকটা ঢোঁক গিললো। বলল, ‘স্যার, নেকড়েরা তো সবসময় নিজের ধান্দাতেই ব্যস্তখাবার-পত্র ঠিক মতো পাওয়া যায় না আজকাল। উপরি রোজগার করার জন্য অনেক খাটতে হয়। তারপর টিকটিকিগুলো মহা ধড়িবাজ। কে কখন কোথায় আড়াল থেকে মোবাইলে ছবি তুলে ফেসবুকের দেওয়ালে টাঙিয়ে দেয়। জনগন দেখতে পেলে নাম ধরে গালাগালি দেয়তার উপর ওই নেকড়েরা আমাদের সারাক্ষণ পাহারা দেয়। কখন চোরাশিকারীরা আমাদের উপর আক্রমণ করে...তার ঠিক আছে? আমরা হলাম জে-ক্যাটাগরির লোকজন। আমাদের নিরাপত্তা ঢিলে করে ওই শালা হারামজাদা শেয়ালদের পাহারা দেবার দরকারটা কি। ওরা হলো কাকের জাত। দেখেন না, যখন একটা কাক বাতিস্তম্ভের বিদ্যুতের তারে কারেন্ট খেয়ে মরে, রাজ্যের কাক এসে কেমন হুজ্জতি করে। কিন্তু সে আর কতক্ষণ। কিছুক্ষণের মধ্যে থিতিয়ে যাবেও আপনি ভাববেন না। ওদের কথা ভেবে সময় নষ্ট করার মতো সময় কোথায় আমাদের, বলুন।

বাঘ দেখল, যুক্তিগুলো কিন্তু মন্দ নয়। তাদের নিজেদের সুরক্ষার ব্যাপারটা তো আর হেলাফেলা করার যায় নাওরা সব পিলপিল করে জন্মায়, দলে দলে মরবে সেটা তো জানা কথা।

বুনোকুকুর এই শুনে একেবারে ক্ষেপে গেল। একেই সে একটু বদরাগী। সে উঠে বলল, ‘হুজুর, আমি বলছি, এটা ঠিক হয় নিভাদ্র মাসে কুকুরেরা যখন দল বেঁধে কুকুরীর পেছন পেছন ঘুরে বেড়ায় জানেন নিশ্চয়। কিন্তু যখন কোন কুকুরী তার সঙ্গী নির্বাচন করে ফেলে তখন অন্য কুকুরেরা তাদের একলা ছেড়ে দেয়। কুকুরেরা পর্যন্ত কখনো অনেকে মিলে একজনকে ভোগ করে না।

চোপ শালা কুকুরের জাতদেব শালা নেকড়েদের লেলিয়ে? প্রচণ্ড রাগে খ্যাঁকশেয়াল খেঁকিয়ে উঠল

সেই সময় হাতি ঘরে এসে ঢুকল। সিংহ এতক্ষণ সামনের আসনে বসে বসে ঢুলছিল। একটু আগেই যে সব কথাবার্তা হলো, কোন কিছুই তেনার কানে যায়নি মনে হলো। বাঘ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। ভালুক আর কুকুরের কথাবার্তা তার বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। কিন্তু তার গিন্নি, মিটিং-এ আসার আগে পইপই করে বারণ করে দিয়েছে, একদম কোন বিষয়ে বিতর্কে জড়াবে না আর সে যেন দুম্‌ করে একজনের পক্ষ না নিয়ে বসে। তাহলে এত দিনের সমস্ত আশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা সব জলে চলে যাবে। সবাইকে নিয়ে মানিয়ে-গুছিয়ে চলতে হবে। সিংহের পরে বনের রাজার আসনটা তার প্রায় পাকা হয়েই আছে হাতি এসে বলল, ‘সিংহ রাজা, আমাদের সমূহ বিপদ, ওরা বাবু-খ্যাঁকশেয়াল আর তার তিন সাকরেদ খ্যাঁকশেয়ালদের ধরে ফেলেছে।

শোনামাত্র সবাই মিলে সামনের জানলায় মুখ বাড়ালো। দেখল, সামনে দিকে যতদূর দেখা যায় জঙ্গলের সমস্ত জন্তু এক জায়গায় এসে জমায়েত হয়েছে। এই জঙ্গল ছাড়াও আশেপাশের আরো বেশ কিছু জঙ্গল থেকে জন্তুরা এসে হাজির হয়েছে। অবাক কাণ্ড। এর আগে এমন বিশাল সমাবেশ তারা আগে কখনো দেখে নি। এমনকি শোনেও নি পর্যন্ত

সিংহকে এবার একটু বিচলিত লাগলো। সে হাতিকে বলল, ‘কই হে হাতিসাহেব, আমরা তো ভিড়ের ওপারে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। তোমার তো অনেক বুদ্ধি আর স্মৃতিশক্তি, একটা কিছু উপায় বাতলে দাও

এদিকে সেখানে কি হতে চলেছে সেটা হাতি অনেকক্ষণ আগেই বুঝে গিয়েছিল। সে দেখল সমস্ত জন্তুরা মিলে ওই চার খ্যাঁকশেয়ালকে আলাদা আলাদা করে চারখানা গাছের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। গাছগুলো বেশ উঁচু আর তার আশেপাশে ডালপালাওয়ালা তেমন গাছ নেই যে তারা লাফিয়ে অন্য গাছে গিয়ে পালিয়ে যাবে। সবাই বিস্ফারিত চোখে দেখল, জন্তুরা এবার গাছের নীচে শুকনো ঘাস-পাতা-জঞ্জাল জড়ো করে তাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেই আগুন আস্তে আস্তে গাছ বেয়ে উপরে উঠছে।

মন্ত্রীসভার সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ। শুধু একটিমাত্র জানলার এপাশ থেকে সমস্ত মন্ত্রী পারিষদ বিস্ফারিত চোখে দেখল, সেই চারখানা গাছ একসঙ্গে দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে।

প্রচণ্ড ভয়ে বাঘমশাইয়ের মনে হল হৃৎপিন্ডটা এবার লাফাতে লাফাতে গলার কাছে এসে আটকে গেছে। একটু আড়ালে গিয়ে বাঘ তার মোবাইলে বাঘিনীকে ফোন করল। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, গিন্নি, এবার ওরা যদি বনে আগুন লাগিয়ে দেয়?’
প্রকাশিত, ইচ্ছেডানা, ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই: