
এই তো! এতক্ষণে সবাই হাত তুলে
ফেলেছেন। ঠিক তাই, তিনি আমাদের এক ও একমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শ্রী রঘুরাম
রাজন ( ট্যুইটারে লোকে ভালোবেসে বলেন R3)। না চেনার কোন কারণ নেই। গত তিন বছরে দেশে-বিদেশে এমন কোন অর্থনৈতিক
অথবা ব্যবসা সংক্রান্ত পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয় নি, যেখানে প্রায়
প্রতিটি সংখ্যায় কোন না কোন কারণে তাঁর ছবি অথবা বক্তব্য ছাপা হয় নি।
তিনি এমন একটি সময়ে এদেশের
সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার হাল ধরেছিলেন, যখন বিশ্ব অর্থনীতির
একের-পর-এক ঢেউয়ের ধাক্কায় এদেশের অর্থনীতির নৌকাটি অনেকটাই টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল।
একদিকে মূল্যবৃদ্ধি, রপ্তানী কমে যাওয়া, দেশের কলকারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়া, দেশের
ব্যাঙ্কগুলির দৈন্য দশা, নামীদামী আন্তর্জাতিক এজেন্সির ‘ক্রেডিট
রেটিং’ কমানোর হুমকি - কি ছিল না সেই তালিকায়! সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। তার উপর লোকসভা
নির্বাচনের বিপুল খরচ আর অন্যদিকে টাকার দর পড়ে যাওয়ায় আমদানির খরচ হু-হু করে
বাড়তে বাড়তে দেশের দেনা-পাওনার অবস্থাটা অনেকটা গরীব বাপের আইবুড়ো মেয়ের বিয়ের
দেওয়ার মতো। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়।
সেই অবস্থা থেকে রঘুরাম রাজন এলেন
উদ্ধার করতে। এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। সেদিনের পর আড়াই বছর কেটে গেছে। এখন যেদিন
তিনি পদত্যাগের কথা জানালেন সেই দিনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার উপছে পড়ছে।
আলু-পেঁয়াজ আর ডালের দাম না কমলেও সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির বাড়বাড়ন্ত লেজটুকু কাটা
পড়েছে ( মূল্যবৃদ্ধি হলো টিকিটিকির ল্যাজের মতো, কেটে দিলেও আবার
গজায়, তাই সর্বক্ষণ খেয়াল রাখতে হয়)।
কিন্তু আমরা হচ্ছি সেই কাঁকড়ার
জাত। কিছুতেই দেশের লোক দেশের জন্যই কিছু ভালো করার চেষ্টা করছে কিংবা দেশের আপামর
গরীব-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত জনসাধারণের আখেরে ভালো হতে পারে সেটা দেখতে পারি না।
তার উপর রঘুরাম রাজন গেঁয়ো যোগী নন, তাঁকে তোষামোদ করে নাম
জোগাড় করতে হয় না (যদিও কিছু ‘স্বামী’দের
সেটা করেই খাওয়া জোটে)। রাজন নিজগুণে আর কর্মদক্ষতায় সারা পৃথিবীর শিক্ষিত,
বুদ্ধিমান ও বিবেচক মানুষদের ভরসা আর সম্মান অনায়াসে আদায় করে নিতে পারেন। তবু
দেশের টান বড় টান। তাই শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পড়াতে নিজের মাতৃভূমির জন্য
কিছু করার তাগিদে তিন বছরের ছুটি নিয়ে চলে আসা। দেশের জন্য কিছুটা ঋণ যদি শোধ করা
যায়।
এসে কি দেখলেন!
দেখলেন, স্বাধীনতার পরে এদেশের
প্রতিটি রাজনৈতিক দল ধনতান্ত্রিক অর্থব্যাবস্থার প্রতিভূ শিল্পপতিদের সাথে গলায়
গলা জড়িয়ে দেশের সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। সে তো অনেকদিন ধরেই খাচ্ছে। সেখানে মেকি
সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী অর্ধশতাব্দী ধরে পারিবারিক শাসনের জাঁতাকলে থাকা দল আর
ধর্মীয় সংখ্যাগুরুর ধুয়ো তুলে জাতীয়তাবাদী দলের কোন তফাৎ নেই।
যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেই পুঁজিপতিদের হাতের মুঠোয় চলে আসেন। সরকার পাল্টায়, সরকারি দলের পতাকার রঙ অনুযায়ী সভাস্থানে চেয়ারের রঙ পাল্টায়, উন্নয়ন প্রকল্পগুলির নাম পাল্টায় কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে কোন পরিবর্তন আসে না। তারা সেই আগের মতোই খরায় জ্বলে যাওয়া ফসলের দিকে তাকিয়ে আত্মহত্যা করে, জলের অভাবে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে রাজপথে ভিক্ষে করে কিংবা গরীব মা-বাবার মেয়ে দিনে-রাতে পাচার হয়ে যায়। অন্যদিকে বংশ পরম্পরায় লালিত-পালিত আদিবাসী গ্রাম ও জঙ্গলের মাটির নীচে কয়লা আর ধাতুর খবর পেয়ে শিল্পপতিদের চোখ লোভে চকচক করে ওঠে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে পেটোয়া সরকারী মন্ত্রী আর আমলাদের কাজে লাগিয়ে দেয় গ্রামের পর গ্রাম খালি করে দেওয়ার কাজে। আদালতের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভিটেমাটি থেকে ভূমিপুত্রদের উৎখাত করতে থাকে। মাটির মানুষদের জীবনধারণের অধিকার, তাদের প্রতিবাদের অধিকার সবকিছুই শেষমেষ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামীদামী ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষনায় বিষয়ে পরিণত হয়।
যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক
জাতীয়করণ করা হয়েছিল সেই স্বপ্ন কবেই চুরমার হয়ে গেছে। ব্যাঙ্কের দায়িত্ব ছিল
দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ক্ষুদ্রঋণ পৌঁছে যাওয়া, মহাজনের হাত থেকে
বাঁচানো। দেশের আপামর ছোট চাষী আর ব্যবসায়ীকে ছোট ছোট ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী হতে
সাহায্য করা। কাগজে-কলমে সে কথা লেখা রইল আর সরকারী ব্যাঙ্কগুলি তাদের পাগড়ি খুলে
রাখল সেইসব পুঁজিপতিদের পায়ের কাছে। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ব্যাঙ্কের জাতীয়করণের
পর থেকেই এদেশের ব্যাঙ্কগুলো জনগণের জন্য প্রায় কিছুই করে নি। তারা দেশের ক্ষুদ্র
ব্যবসায়ী আর চাষীদের ঋণ দেয় না কেন না তাদের নাকি ঋণ পরিশোধ করার কোন ক্ষমতাই নেই।
অথচ পরিসংখ্যান বলে গরীবেরাই সব থেকে বেশী ঋণ শোধ করে ( বাংলাদেশের গ্রামীণ
ব্যাঙ্ক আর এদেশের বন্ধন ব্যাঙ্কের ইতিহাসটুকু জানলেই আর কোন সংশয় থাকার কথা নয়)। তার জায়গায় সরকারী ব্যাঙ্কগুলো ( বে-সরকারী ব্যাঙ্কগুলোর কথা না হয়
ছেড়েই দেওয়া গেল) কাদের ঋণ দিয়েছে। শুধুমাত্র বৃহৎ শিল্পপতিদের (পড়ুন সেই সব রাজনৈতিক
নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে)। সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে এরা পৈতৃক জমিদারী মনে করে নিজেদের
মতো কাজে লাগিয়ে গেছে। ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে তারা স্যুইস কিংবা মরিশাস কিংবা পানামার
ব্যাঙ্কে চালান করে দিয়েছে, মোচ্ছব করেছে। আর ব্যাঙ্কের খাতায় দিনে
দিনে বেড়েছে পরিশোধ না করা ঋণের পরিমাণ।
ব্যাঙ্ক কি করেছে? তারা সেই বকেয়া
ঋণের বোঝা কমাতে আমার-আপনার রাখা গচ্ছিত আমানতে যতটা সম্ভব কম সুদ দেবার চেষ্টা
করেছে। এতবড় দেশের কোটি কোটি মানুষের গচ্ছিত সম্পদ থেকে এককোণা ভেঙ্গে নিয়ে
নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু সে আর কতদিন! বছরের পর বছর অনাদায়ী ঋণ
বেড়েছে। এদিকে পৃথিবীর টালমাটাল অর্থনীতির ধাক্কায় এদেশেও অনিশ্চয়তা বাড়ছিল। আর অনিশ্চয়তা বাড়লেই অর্থনীতি উল্টোপথে হাঁটে। মূল্যবৃদ্ধি লাগাম ছাড়ায়। লোকের পকেটে টান পড়ে। সংসার চালাতেই কাছা খুলে পড়ছে
তো ব্যাঙ্কের সঞ্চয়! ভোগ্যবস্তুর চাহিদা কমে। শিল্পে উৎপাদন কমে। কর্মসংস্থান কমে।
উন্নয়নের চাকা উল্টোদিকে ঘুরতে
শুরু করে। তাছাড়া লোকে তখন জমানো টাকা ব্যাঙ্কে না
রেখে সোনা কিনে রাখে। অসময়ের ভরসা। আর তখন আমানতকে
উৎসাহী করতে ব্যাঙ্কেরও সুদ বাড়তে থাকে। শিল্পপতিদের ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এককথায় তাদের স্বার্থে ঘা লাগে।
রাজনের প্রবেশকালে সরকারি
ব্যাঙ্কগুলোর তখন একেবারে হাঁসফাঁস অবস্থা। একদিকে অনাদায়ী ঋণ আর অন্যদিকে সুদের
উচ্চহার। পুরো ম্যাকডোনাল্ডের স্যান্ডুইচ। আর স্যান্ডুইচকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে গাঁথা থাকে
একটি সূচালো ক্ষুদ্র বংশদন্ড।
এদিকে ব্যাঙ্কগুলি অনাদায়ী ঋণের
পরিমাণ চেপে দিতে থাকলো। আমি-আপনি কে দেখতে যাচ্ছি কে কার কত ঋণ শোধ করে নি! এদিকে
ব্যাঙ্কের সম্পদ (পড়ুন দেশের সম্পদ) ঘুণ ধরা কাঠের দরজার মতো ভেতরে ভেতরে ফাঁপা
হয়ে যাচ্ছে। দরজার কান পাতলে যে বিশেষজ্ঞেরা ঘুণপোকার
“কুট-কুট” শব্দ শুনতে পান তারা হয় ইচ্ছাকৃত বধির হয়ে
গেছেন আর নয় সেই রাজনৈতিক নেতাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু পুঁজিপতিদের (crony
capitalist) কান কেটে নেবার হুমকিতে না শোনার ভান করে পড়ে আছেন।
আর এই অবস্থায় রঘুরাম রাজন এসেই সেই ভিমরুলের চাকে ঢিল মারলেন। তিনি অভিজ্ঞ ডাক্তার। দায়িত্ব নিয়েই ব্যাঙ্কগুলিতে গচ্ছিত সম্পদের স্বাস্থ্য-পরীক্ষায় নেমে পড়লেন। যা হবার ছিল তাই হলো। সব পরীক্ষাতেই ডাহা ফেল। উচ্চচাপ, নিম্নচাপ, রক্তে চিনির দৌড়াদৌড়ি, কিডনি ধুঁকছে, ফুসফুসে জল জমেছে, ঘাড়-কোমর সোজা করা যাচ্ছে না। কি নেই! তিন মাস পরপর আর্থিক ফলাফল বেরোয় আর ব্যাঙ্কগুলোর হাড়গোড় বেরিয়ে আসা কঙ্কালসার চেহারাটা জনসমক্ষে বেরিয়ে পড়ে। এতদিন শেয়ার মার্কেটের আকাশে উড়তে থাকে ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম হটাৎ গোঁত্তা খেয়ে সোজা ভূতলে ধরাশায়ী। ঝুলি থেকে একের পর এক বেড়াল বেরোতে থাকে। জানা যায় কোন কোন ‘মহান’ শিল্পপতিদের হেঁসেলের খবর না নিয়েই স্রেফ তাঁদের মুখের কথায় ব্যাঙ্কগুলি অকাতরে ঋণ দিয়েছিল। এখন তাদের দুয়ারে হত্যে দিয়ে পড়েও থাকলেও আর কোন উপায় নেই। সেইসব মহান শিল্পপতিদের কারো কারো গণেশ উল্টেছে, কেউ কেউ নিজেই ডিগবাজি খেয়ে অন্য দেশে গিয়ে ইঁদুরের গর্ত খুঁজছেন আর দু’-একটি চুনোপুঁটি কোন রকমে রুমালে মুখ আড়াল করে আদালত আর জেলখানায় যাতায়াত শুরু করছেন।
ফল কি হলো? যা হবার ছিল তাই হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য এই “তেতো” চিকিৎসা দেশের
সর্বোচ্চ নেতাদের ও ক্ষমতাশালী লোকেদের পছন্দ হয় নি। ব্যাঙ্কগুলির কাছা তো খুলে পড়েছেই আর তাদের বন্ধু-সহযোগী সেইসব
শিল্পপতি আর শাগরেদদের মুখে কালি লেপার অপেক্ষায় (সর্বোচ্চ আদালতের হাতে তালিকা
পৌঁছে গেছে)। এ হেন অবস্থায় এতদিন ধরে শিল্পপতিদের
“নুন” খাওয়া রাজনীতিবিদদের একাংশ কোমরে গামছা বেঁধে নেমে পড়েছিলেন রঘুরাম রাজনকে পদচ্যুত
করার জন্য। যত নষ্টের গোড়াকে না সরালে তাঁরা দেশের জনগণের টাকায় মোচ্ছব করতে
পারছেন না যে!
তাই লজ্জার মাথা খেয়ে রাজনের
পেছনে লেগে পড়া। রা-গা, সো-গা, চিডুর মতো
হাঙরদের ছেড়ে ঘরোয়া “স্বামী” আদাজল খেয়ে লেগে পড়লেন।
নিন্দুকেরা বলতে শুরু করেছেন, এটা নাকি আইয়ারের সাথে আয়েঙ্গারের ঝগড়া। ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই এতো ঠুনকো
নয়।
রঘুরাম রাজন বিনা কারণে সুদের হার
কমাতে চান নি। তাঁর বিবেচনায়, যতক্ষণ না মুদ্রাস্ফীতির চোখ রাঙানি কমছে ততদিন
সুদের হার কমালে দেশের ব্যবসায়ীদের লাভ হয় আর মধ্যবিত্তদের মাথায় হাত পড়ে। বিশেষ
করে অবসরপ্রাপ্তদের, যে দেশে বুড়ো হলেই সংসার আর সরকার –
দু’পক্ষই যাদের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। তাই অর্জুনের
মতো শুধুমাত্র দেশের সার্বিক ভালো করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নেমে পড়া রাজনকে সিংহাসন থেকে
সরানো ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না সেই সব রাজনৈতিক নেতা আর শিল্পপতিদের অশুভ আঁতাত
গোষ্ঠীর।
হয়তো বলবেন, এর আগে কি সরকারী
পদাধিকারীদের অকালে সরে যেতে হয় নি! বহুবার হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পরে বিভিন্ন পদাধিকারীদের
‘স্বেচ্ছায়’ ইস্তফা দিতেই হয়। এই সরকারের দু’বছরের মধ্যে এরকম ৩৫০ জন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন
কারণে পদচ্যুত হয়েছেন। এটা নতুন কোন পরিসংখ্যান নয়। তবে
এক্ষেত্রে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর দরকারও পড়ে না।
আসলে সব সরকারই চায়, রিজার্ভ
ব্যাঙ্কে তিনিই আসবেন যিনি ঘাড় গুঁজে সরকারের তাঁবেদারি করবেন আর ব্যাঙ্কগুলিকে
যজমানী ষাঁড়ের মতো রাস্তায় ছেড়ে দেবেন। যে যেমন পারিস চরে খা। তবে এই ষাঁড়গুলি
“গরু” নয়। তারা
দেখেশুনে, ভেবেচিন্তে গুঁতো মারে। আপনি-আমি গৃহঋণের কিস্তি তিনমাস শোধ না করতে
পারলেই সোজা গুণ্ডা পাঠিয়ে হুমকি আসতে পারে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম
ব্যালান্স না থাকলে আপনাকে না জানিয়ে জরিমানা কেটে নিতে পারে। অবশ্য ব্যাঙ্ক যত স্বাধীনতা পাবে, ততই তার শেয়ারের দাম বাড়তে থাকবে।
আমি-আপনি আদার ব্যাপারি, জাহাজের খবরে কি আসে-যায়!
যদি একটু তলিয়ে দেখা যায়, ১৯৩৫ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্থাপিত হবার পর থেকে যাঁরা গভর্নর হয়েছেন,
তাদের বেশীর ভাগই ছিলেন সরকারী আমলা। এর মধ্যে অর্থনীতিবিদ যে নেই
তা নয়। এর আগে চারজন অর্থনীতিবিদ গভর্নর হয়েছিলেন কিন্তু তাদের কর্মজীবনের বেশীর
ভাগ কেটেছিল সরকারী চাকুরে হিসেবে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ডাক শুনে কিংবা তাঁর পছন্দ
অনুসারী সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তাঁরা হয়তো ঢোঁক গিলেছেন কিন্তু শেষমেষ ‘তেতো বড়ি’
গেলার মতো মেনেও নিয়েছেন।
যেদিক থেকে বলতে গেলে রঘুরাম রাজন
এসেছিলেন ভিন্ন গ্রহ থেকে। যিনি সরকারি চাকরি করেন নি (অল্প কিছুদিনের জন্য
পরামর্শদাতা ছিলেন)। তাই রঘুরাম রাজন পূর্বসূরীদের দেখানো পথে পা বাড়ান নি।
স্বশাসিত সংস্থার মৌলিক অধিকার অনুযায়ী সিদ্ধান্তের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেছেন। তিনি যে ঢোঁক গেলার পাত্র ছিলেন না সেটা সবাইকে বুঝিয়ে ছেড়েছেন। এমনকি
সরকারের ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরদের সুদ্ধ।
এছাড়াও কতগুলো “বিশেষ” কারণও ছিল।
আসলে নিজের কর্মগুণে রঘুরাম রাজন দিনে দিনে তারকা হয়ে উঠছিলেন। খবরের কাগজগুলোর
‘ব্যবসার খবরের’ পাতাগুলি তাঁর বাণী আর ছবিতে ভরে উঠছিল। ফলে নেতাদের “সেলফি”
ছাপানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। পাশাপাশি মিডিয়ার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা আর সোস্যাল
মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষের অকুণ্ঠিত ভরসা ও সমর্থন নেতা-আমলাদের পালের হাওয়া
কেড়ে নিচ্ছিল। দেশে-বিদেশের তাবড় মানুষদের তাঁকে খোলাখুলি সমর্থন জোগানোটাও ভালো
চোখে দেখা যাচ্ছিল না। শেষমেষ রঘুরাম রাজনের এই ‘জীবন ছাপিয়ে বেরিয়ে আসা ভাবমূর্তি’-টাকে
অনেকেই সহ্য করতে পারছিল না।
এও আসলে আর এক মহাভারত। তবে যুদ্ধের
ময়দানে এবার আর ভীষ্ম নয়। একা ‘অর্জুন’কে হারানোর জন্য কৌরবদের আর কোন উপায় ছিল
না। শেষমেষ ‘শিখন্ডি’কে সামনে রেখে যুদ্ধে যেতে হলো।
তবে এত অন্ধকারের মধ্যেও একটা
আশার আলো দেখার সম্ভাবনা রয়েই গেলো। আমাদের গভীর বিশ্বাস রঘুরাম রাজনই হয়তো হতে
চলেছেন সেই “বিশুদ্ধ ভারতীয়”, যিনি অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বিশ্বব্যাঙ্ক অথবা
আই-এম-এফের শীর্ষপদে বসতে চলেছেন অথবা “অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার” পেতে চলেছেন।
আমরা তাঁর সেই বিরল সম্মানপ্রাপ্তির দিনটির জন্য দেশের মানুষ হিসাবে হর্ষোল্লাসে শরিক হবার আশায় জেগে রইলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন