পুতুলনাচ


সবাই তো আর খারাপ নয়, কেউ কেউ খারাপ -এইসব সোহাগী কথাবার্তার দিন বোধহয় শেষ। নারদকান্ডের ভিডিওতে এতগুলো মন্ত্রী-সাংসদ-পুলিশ থুতু লাগিয়ে টাকা গুনে গুনে নিল, সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও সরকার আর পুলিশ কিছুতেই দেখতে পেল না। সবাই ভেবেছিল, সাধারণ মানুষের আর বিরোধী দলের অভিযোগ থানায় জমা পড়লে যা ভবিতব্য হয় এবারেও তাই হবে। অভিযোগ জমা পড়লেই “নীলরঙা” পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে থানা চত্বরের ধুলো মাখিয়ে সেই অভিযোগপত্রের কাগজগুলিকে কোথায় যে রেখে দেবে, সেগুলো নাগিনার নায়িকাও খুঁজে পাবে না। তবে সিবিআইয়ের পাল্লায় পড়ে তেনাদের এখন নিয়মিত দপ্তরে গিয়ে ধর্ণা দিতে হচ্ছে।

কিছুদিন আগে আদালত খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে এ রাজ্যে এখন পুতুলখেলা চলছে। এটা কারো ব্যক্তিগত ভালো কিংবা খারাপ হওয়ার বিষয় নয়। আমরা এমন একটা সময়ে এদেশে আছি যে আজকাল আদালতে মামলার রায় উচ্চারিত না হওয়া পর্যন্ত এবার হয়তো আমরা দিনে সূর্য ওঠে কিনা সেটাও মানতে চাইব না। আদালত তাই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে সরকারি পুলিশতন্ত্র সরাসরি রাজনৈতিক দলের নেতাদের হাতে পুতুল। আচ্ছা, পুতুলনাচের সময় কি কোন ভালো কিংবা খারাপ পুতুল দেখেছেন? তারা তো আমাদের নাচ দেখায়। মনোরঞ্জন করে। হ্যাঁ, অবশ্যই বলতে পারেন কে ভালো নাচে কিংবা কে খারাপ নাচে।

আরো একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন, সবচেয়ে ভালো নাচে যে পুতুলগুলো সেগুলো কেমন ল্যাতপেতে হয়! একেই বলে নমনীয়তা। আমাদের রাজ্যের পুলিশের মধ্যেও এইরকম নমনীয়তা দেখা যায়। 

শাসকদলের নেতারা রাস্তার মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে কষে চড় লাগালেই নমনীয়তার জোরে তাদের আঘাত লাগে না কিংবা অন্য গালটা সামনে এসে পড়ে। নরম নমনীয় হৃদয়ের জন্য তাদের নিজেদের অপমানিত বোধ করেন না। উলটে করজোড়ে মন্ত্রীর সামনে ক্ষমা চেয়ে নেন। শাসকদলের লুম্পেনবাহিনী লাঠি হাতে তেড়ে এসে থানায় হামলা করলে পুলিশ ওইটুকু চেয়ারের তলায় কোনরকমে ঠেলেঠুলে ঢুকে পড়েন। সবই নমনীয় শিরদাঁড়ার জন্য। মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতা-নেত্রীরা ভাষণ দিচ্ছেন, এদিকে ঘুরছেন, ওদিকে যাচ্ছেন আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকর্তা ঘাড়ভাঙ্গা পুতুলের মতো একবার পাশাপাশি আর একবার উপর-নীচে ঘাড় দুলিয়েই যাচ্ছেন। দর্শক হিসাবে জনগণের কিন্তু দারুণ মনোরঞ্জন হয়।

সামনে পঞ্চায়েত ভোট আসছে। পুলিশসহ সরকারি কর্মচারীদের একটু তোয়াজ করা দরকার। তাই কেউ যাতে “ঘেউ ঘেউ ফেউ ফেউ” না করেন তাই আগেভাগেই খাবার ছুঁড়ে দিয়েছেন। পড়শি রাজ্যে আলু পাঠানোর আগেই এরইমধ্যে নারদকান্ডে অভিযুক্ত দু'জন মন্ত্রী পাশের রাজ্যে রপ্তানী হয়ে গেছেন। তারা এখন চাক্কি পিসিং অ্যান্ড পিসিং অ্যান্ড পিসিং। আরো এক ডজন মন্ত্রী আগেভাগেই তৈরী হচ্ছেন। দেখেশুনে যা মনে হচ্ছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই রাজ্যবাসী আরো এক ডজন গল্পের জন্য তৈরী থাকতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই: