অদৃশ্য

দুপুরে খাওয়ার পরে বাসন ধুচ্ছিল মাধুরি। বসার ঘরে টিভি দেখতে দেখতে কর্তা চেঁচিয়ে উঠলেন
, “জানো, লকডাউন বেড়ে গেল। মে মাসে শেষ পর্যন্ত।”

লকডাউন। লকডাউন । লকডাউন।

আবার লকডাউন বেড়ে গেল শুনে মাধুরি ক্ষেপে গেলেন। গত দু’মাসে এই নিয়ে চারবার। লকডাউনের প্রথম ক’দিন বেশ মজা হল। একদিন সবাই মিলে থালা-বাটি বাজিয়েছিল। ক্লাবের ছেলেদের সাথে একশো-দেড়শো প্যাকেট চাল-ডাল-তেল দিয়ে এসেছিলেন পাশের বস্তির মানুষদের। দেদার ছবি তুলে ফেসবুকে দিতেই কয়েক হাজার লাইক পড়েছে। নন্দীবৌদির সাথে একদিন ছাদে দেখা হল। বাব্বাঃ, আজকাল আকাশটা কি নীল লাগছে। কারখানা বন্ধ। দূষণ হচ্ছে না। নতুন নতুন পাখি আসছে। বৌদির সাথে কিছুদিন কথা বন্ধ ছিল। এবার নন্দীদা সোসাইটির সম্পাদক হয়েছেন। বলা তো যায় না, কখন কে কার কাজে লেগে যায়। বৌদি জিজ্ঞেস করছিলেন, রেশনের কূপন পেয়েছো?

পরিযায়ী শ্রমিকঃ তোমরা কি এদেশেরই মানুষ!

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এক ভীষণ টানাপোড়েন চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে রাজ্যগুলোর রাজধানী আর বড়-মাঝারি শিল্পতালুকগুলিতে যেখানে প্রায় ২০ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক তাদের পরিবারসুদ্ধ আটকে পড়েছেন গত দু’মাসের বেশী সময় ধরে।

লকডাউন শুরু হওয়ামাত্র সরকার প্রথমেই তাদের আটকে দিল কি না তারা ফিরে গেলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পারে। বাস, ট্রেন বন্ধ হয়ে গেল। তবু কেউ কেউ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিল নিজের গ্রামের দিকে। যা থাকে কপালে। হাজার হাজার মাইল পায়ে হেঁটে তাদের অনেকেই পৌঁছাল। আবার অনেকের ক্ষীণ প্রাণটুকু অনাহারে, অবহেলায় শেষ হয়ে গেল রাস্তাতেই। যারা আটকে পড়ল তারা আধপেটা খেয়ে, পুলিশের লাঠি খেয়ে, নিত্য অপমান সয়ে কোনরকমে প্রাণটুকু জিইয়ে রাখল।

শেষমেশ এতদিন পরে সরকার হটাৎ জেগে উঠেছে। অনেক সাধ্য-সাধনার পর রাজী হল কিছু ট্রেন চালানোর। কিন্তু ভ্রমণের ভাড়া দেবে কে?